রবিবার, ১৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০:৩৭ পূর্বাহ্ন

গোপালগঞ্জে বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে রাষ্ট্রপতি ও প্রধনমন্ত্রীর শ্রদ্ধা

গোপালগঞ্জে বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে রাষ্ট্রপতি ও প্রধনমন্ত্রীর শ্রদ্ধা

জয়ন্ত শিরালীঃ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, শিশুদের জন্য আমরা একটা সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ে যেতে চাই। এজন্য দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা হতে নেয়া হয়েছে। আজকে আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। এ মর্যাদা ধরে রেখেই আগামী দিনের বাংলাদেশকে উন্নত ও সমৃদ্ধ সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলবো। বৃহস্পতিবার বিকেলে গোপালগঞ্জে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০২-তম জন্ম-বার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবসের আলোচনা সভায় যোগ দিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, আমাদের লক্ষ্য শিশুরা সুরক্ষিত থাকবে, সুন্দর জীবন পাবে। তাই জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে ১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পর শিশুদের উন্নয়নের জন্য বহু প্রাইমারী স্কুল জাতীয়করণসহ আমরা নানা ব্যবস্থা নেই। ২০০৮ সালে ক্ষমতায় এসে শিশুদের সুরক্ষার জন্য জাতীয় শিশু শ্রম নীতি ২০২১, পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ সুরক্ষা আইন ২০১০, জাতীয় শিশু নীতি ২০১১, মাতৃদুগ্ধ বিকল্প শিশুখাদ্য বাণিজ্যিকভাবে প্রস্তুতকৃত শিশুর বাড়তি খাদ্য ও ব্যবহার সরঞ্জামাদি বিপণন নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৩ প্রণয়ন করি। প্রতিবন্ধীদের সুরক্ষার জন্য প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন ২০১৩, নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে জাতীয় কর্ম-পরিকল্পনা ২০১৩-২০২৫ প্রণয়ন করে বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। বাংলাদেশ শিশু একাডেমী আইন ২০১৮, বাল্যবিবাহ নিরোধকল্পে জাতীয় পরিকল্পনা ২০১৮-২০৩০ পর্যন্ত প্রণয়ন করেছি এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) আইন ২০২০ প্রণয়ন করে নারী ও শিশুদের সার্বিক সুরক্ষার ব্যবস্থা নিয়েছি। শতভাগ শিশু যাতে স্কুলে যায় সে ব্যবস্থা নিয়েছি। করোনাকালীন সময়ে শিশুরা যাতে শিক্ষায় বঞ্চিত না হয় সেজন্য অনলাইন ক্লাশসহ নানা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সাধারণ শিশুদের খেলাধূলাসহ নানা প্রতিযোগিতার জন্য প্রতিটি উপজেলায় ১টি করে মিনি-স্টেডিয়াম তৈরী করে দিচ্ছি। শুরু থেকেই শিশুরা যাতে নানাধরণের শিক্ষা পেতে পারে সেজন্য প্রাইমারী পর্যায় থেকে উচ্চ পর্যায় পর্যন্ত আন্তঃস্কুল খেলাধূলার প্রতিযোগিতা ও সংস্কৃতি চর্চাসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এভাবে শিশুদের জন্য বিভিন্ন আমরা কাজ যাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের লক্ষ্য ২০৪১। ২০৭১ এ আমরা স্বাধীনতার শতবর্ষ উদযাপন করব এবং ২১০০ সাল পর্যন্ত এ বাংলাদেশের উন্নয়ন পরিকল্পনাও আমি করে দিয়ে গেছি। শিশুদের ভবিষ্যৎ যাতে উজ্জ্বল হয়, সুন্দর হয়, সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমাদের সকল কর্ম-পরিকল্পনা।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতার জন্ম শতবার্ষিকী উদযাপন শুরু করেছিলাম ২০২০ সালে। ২০২১ সালে আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদ্যাপন করেছি। এরই ধারাবাহিকতায় এবছর জাতির পিতার জন্ম শতবার্ষিকী উদ্যাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যৌথ আয়োজনে আমরা জাতীয় শিশু দিবসটি উদযাপন করছি।
দিবসের অনুষ্ঠানমালা ছাড়াও টুঙ্গিপাড়ায় ১৮ মার্চ থেকে ২৫ মার্চ পর্যন্ত দলের পক্ষ নানা আয়োজন করা হয়েছে বলেও জানান দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা। আওয়ামীলীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগ, শ্রমিকলীগ, মহিলা আওয়ামীলীগ ও যুব মহিলা লীগ পৃথক পৃথক দিনে তারা অনুষ্ঠান করবে বলেও জানান তিনি। প্রত্যেকটি অনুষ্ঠানে আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দ ও বিশিষ্ট আলোচকবৃন্দ এবং মন্ত্রীপরিষদের সদস্যরা উপস্থিত থাকবেন। সেইসঙ্গে ২১ থেকে ২৬ মার্চ পর্যন্ত সরকারি শেখ মুজিবুর রহমান কলেজ মাঠে মুজিববর্ষ লোকজ মেলার উদ্বোধন ঘোষণা করে তিনি বলেন, বৈচিত্রময় বাংলার চিরায়ত সংস্কৃতিকে তুলে ধরতে লোকজ পণ্যের প্রদর্শণীসহ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে নিয়ে নানাধরণের আয়োজন থাকবে এ মেলায়। মেলায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব, মুক্তিযুদ্ধ, বাংলাদেশ বিষয়ক বই, চলচ্চিত্র প্রদর্শণী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন থাকবে। নানাভাবে নানা কাজের মধ্য দিয়ে এ জাতীয় কমিটি বঙ্গবন্ধুকে জাতির কাছে তুলে ধরায় কমিটির সকলকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন প্রধনমন্ত্রী।
সমাধি সৌধের ১নং গেটের সম্মুখভাগে বিকেল ২টা ৫০ মিনিটে জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে শুরু হয় আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনষ্ঠান। আলোচনা সভায় শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন, আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়ামের অন্যতম সদস্য ও গোপালগঞ্জ- ২ আসনের সাংসদ ড. শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মুহাম্মদ ফারুক খান এমপি, মুজিববর্ষের জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা এবং শিশু প্রতিনিধি উত্তর গোপালগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী শেখ মুনিয়া ইসলাম।
আলোচনা সভা শেষে পুত্র সজিব ওয়াজেদ জয়, ভাগ্নে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিকী ববি ও অন্যান্য অতিথিদের সাথে নিয়ে দর্শক সারিতে বসে প্রধানমন্ত্রী উপভোগ করেন “টুঙ্গিপাড়া হৃদয়ে পিতৃভূমি” শিরোনামে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। দেশের বরেণ্য শিল্পদের অংশগ্রহণে, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মনোমুগ্ধকর পরিবেশনায় উপস্থাপন করা হয় বঙ্গবন্ধুকে। অনুষ্ঠানে শেখ হাসিন রচিত গ্রন্থ “শেখ মুজিব আমার পিতা” থেকে পাঠ করেন অভিনেত্রী তারিণ ও সহ লিল্পীরা এবং বিজরি বরকতুল্লাহ আবৃত্তি করেন শেখ রেহানা রচিত কবিতা “বাবা”। এরপরই বাবার তবলা আর ময়ের তানপুরার সাথে ইসরাত জাহানের সারদ এক মনোমুগ্ধকর পরিবেশের সৃষ্টি করে। অমৃত সদনে চলো যাই, আনন্দ যজ্ঞে আমার নিমন্ত্রণ, বিকশিত শিশু; আলোকিত ভবিষ্যৎ, শিশুদের চোখে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ, দেশ বরেণ্য শিল্পীদের কণ্ঠে সমবেত সঙ্গিত, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিল্পীদের অংশগ্রহণে- যুদ্ধ কাহন, টুঙ্গিপাড়া গ্রাম থেকে এমন শিরোনামে সাজানো হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান মালা। “যার জন্ম না হলে হতো না এই দেশ স্বাধীন, এই সেই খোকা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর আজ জন্মদিন” সঙ্গিত শিল্পী মমোতাজের কষ্ঠে এই গানের মাধ্যমে শেষ হয় দিনের আয়োজন। পরে সন্তান ও ভাগ্নেকে সাথে নিয়ে শিশুসহ শিল্পীদের সাথে ফটো সেশনে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী।
এর আগে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালী রাজনীতির মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০২-তম জন্ম-বার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবসে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আব্দুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৃহস্পতিবার সকাল ১১টা ২৬ মিনিটে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতার সমাধিবেদীতে প্রথমে রাষ্ট্রপতি ও পরে প্রধানমন্ত্রী পৃথকভাবে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ সময় সশস্ত্রবাহিনীর নেতৃত্বে তিনবাহিনীর একটি চৌকষ দল অনার গার্ড প্রদর্শণ করে। এরপর তারা পবিত্র ফাতেহা পাঠ করে বঙ্গবন্ধুসহ পরিবারের নিহত সদস্য ও স্বাধীনতা যুদ্ধে নিহত ৩০ লক্ষ শহীদের আত্মার শান্তি কামনায় বিশেষ মোনাজাতে অংশ নেন। পরে বঙ্গবন্ধু ভবনে রক্ষিত মন্তব্য বহিতে স্বাক্ষর করেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আব্দুল হামিদ।
এর আগে ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারযোগে রাষ্ট্রপতি টুঙ্গিপাড়া পৌঁছালে ১১টা ২৪ মিনিটে সমাধি সৌধের ২নং ফটোকে তাকে অভ্যর্থনা জানান প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়ামের অন্যতম সদস্য ড. শেখ ফজলুল করিম সেলিম এমপি। এসময় রাষ্ট্রপতি অপেক্ষারত নেতা কর্মীদের সকলকে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান।
এসময় আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য আমির হোসেন আমু, বেগম মতিয়া চৌধুরী ও জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাবেক চীফ-হুইপ আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ ও আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সংসদ সদস্য শেখ হেলাল উদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রীর ভাগ্নে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিকী ববি সহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও পদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা সমাধি সৌধে উপস্থিত ছিলেন।
পরে রাষ্ট্রপতিকে বিদায় দিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা দলের সিনিয়র নেতাদের নিয়ে দলের পক্ষে জাতির পিতার সমাধিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পন করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর প্রধানমন্ত্রীকে সাথে নিয়ে বেদিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পন করেন জাতির পিতার জন্ম শতবার্ষিকী উদ্যাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির নেতৃবৃন্দ।
এর পর জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরীণ শারমিন চৌধুরী জাতির বঙ্গবন্ধুর সমাধি বেদীতে ফুল দিয়ে গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
এদিকে, জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে টুঙ্গিপাড়াসহ গোপালগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে। পুরো সমাধি সৌধ কমপ্লেক্সকে দেয়া হয়েছে এক ভিন্ন রূপ। ঢাকা-খুলনা মহাসড়কসহ বিভিন্ন সড়কে নির্মিত হয়েছে শোভা বর্ধণকারী অসংখ্য তোরণ। গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলো বঙ্গবন্ধু, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি-সম্বলিত ব্যানার-ফেস্টুনে সাজানো হয়েছে। এছাড়া জাতির জনকের জন্য প্রার্থণা হয়েছে বিভিন্ন ধর্মীও উপসনালয়ে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..




© All rights reserved 2018 Banglarnayan
Design & Developed BY ThemesBazar.Com