বৃহস্পতিবার, ০৬ মার্চ ২০২৫, ১১:৩৪ অপরাহ্ন
বাদশাহ মিয়াঃ
না ফেরার দেশে চলে গেলেন বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ, সংসদের উপনেতা ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। রোববার দিবাগত রাত ১১টা ৪০ মিনিটে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মত্যু বরণ করেন। তার প্রথম জানাজার নামাজ ফরিদপুরের নগরকান্দার এম এন একাডমি স্কুল মাঠে সোমবার (১২ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টা ১৫ মিনিটে নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
এর আগে ঢাকা থেকে মৃতদেহ সকাল পোনে ১১টার দিকে নগরকান্দায় আনা হয়। ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকারের নেতৃত্বে পুলিশের একটি চৌকস দল তাকে গার্ড অব অনার প্রদান করে। এরপর তার নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। বিভিন্ন শ্রেণিপেশার হাজার হাজার সাধারণ মানুষ জানাজায় অংশ নেন। এর আগে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম ও সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর কনিষ্ঠপুত্র শাহদাব আকবর লাবু চৌধুরী।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল, পুলিশ সুপার মোঃ শাহ্জাহান, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হক, সাধারণ সম্পাদক ইসতিয়াক আরিফ, নগরকান্দা বিএনপির সভাপতি লিয়াকত আলী খান বুলু, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের শ্রম ও জনশক্তি বিষয়ক উপকমিটির সদস্য ও বঙ্গবন্ধু সেনা পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মেজর (অবঃ)আতম হালিম উপস্তিত ছিলেন। জানাজা শেষে মরদেহ ঢাকায় নেওয়া হয়েছে। বিকেল ৩টায় সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্যে মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রাখা হয়। বাদ আসর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে তার দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
পরবর্তীতে বনানী কবরস্থানে তাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয়েছে। রোববার রাত ১১টা ৪০ মিনিটে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী মারা যান। তার বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় সম্প্রতি সাজেদা চৌধুরীকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল ভর্তি করা হয়। সেখানে তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে রাখা হয়েছিল।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য সাজেদা চৌধুরী ফরিদপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য। বর্ষীয়ান এই রাজনীতিবিদের অসুস্থতার কারণে সম্প্রতি তার নির্বাচনী এলাকা ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন স্থগিত করা হয়েছে। দীর্ঘ ৯ বছর পর সোমবার এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। তার আগেই রোববার মধ্যরাতে চলে গেলেন তিনি। ১২ সেপ্টেম্বর সরকারি এম এন একাডমীর মাঠে সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসব উপস্তিত থাকার কথা ছিল এই বর্ষিয়ান নেতার। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস সেই ১২ সেপ্টেম্বর সেই মাঠেই তার প্রথম জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়।
সাজেদা চৌধুরী ১৯৩৫ সালর ৮ মে মাগুরা মামাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম সৈয়দ শাহ হামিদ উল্লাহ এবং মাতা সৈয়দা আছিয়া খাতুন। শিক্ষাজীবনে তিনি স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। তার স্বামী ভাষা সৈনিক, রাজনীতিবিদ এবং সমাজকর্মী গোলাম আকবর চৌধুরী। ২০১৫ সালের ২৩ নভেম্বর তার স্বামী মৃত্যুবরণ করেন।
সাজেদা চৌধুরী ১৯৭৪ সালে গ্রামীণ উন্নয়ন ও শিক্ষায় বিশেষ অবদানের জন্য ইউনেস্কো ফেলোশিপপ্রাপ্ত হন এবং একই সময়ে বাংলাদেশ গার্ল-গাইড অ্যাসোসিয়়শনের জাতীয় কমিশনার হিসেবে সর্বোচ্চ সম্মানসূচক সনদ সিলভার এলিফ্যান্ট পদক লাভ করেন। তিনি ২০০০ সালে আমেরিকান বায়ো গ্রাফিক্যাল ইনস্টিটিউট কর্তৃক ওমেন অব দি ইয়ার নির্বাচিত হন। ২০১০ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত করে।
১৯৫৬ সাল থেকে সাজেদা চৌধুরী আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত হন। ১৯৬৯-১৯৭৫ সময় কালে তিনি বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধকালীন কলকাতা গোবরা নার্সিং ক্যাম্পের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ছিলেন তিনি। ১৯৭১ সালে তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। ১৯৭২-১৯৭৫ সময় কালে বাংলাদেশ নারী পুনর্বাসন বোর্ডের পরিচালক, ১৯৭২-১৯৭৬ সময়কালে বাংলাদেশ গার্ল গাইডের ন্যাশনাল কমিশনার এবং বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ডের পর ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৮৬ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, ১৯৯২ সাল থেকে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক প্রদত্ত পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন কমিটির আহবায়কের দায়িত্ব ও তিনি পালন করছেন।
তিনি ফরিদপুর-২ (নগরকান্দা, সালথা উপজেলা ও সদরপুরের কৃঞ্চপুর ইউনিয়ন) থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি এ অঞ্চল থেকে নির্বাচিত হন। ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি জাতীয় সংসদের উপনেতা হন।