সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:৩০ অপরাহ্ন

দাকোপে বিয়ের ৬ মাসের মাথায় নববধুর রহস্যজনক আত্মহত্যা

দাকোপে বিয়ের ৬ মাসের মাথায় নববধুর রহস্যজনক আত্মহত্যা

দাকোপ (খুলনা) প্রতিনিধি:
দাকোপ উপজেলায় কামারখোলা গ্রামে নব বধুর রহস্য জনক আত্মহত্যা। এ ঘটনাকে কেন্দ্রকরে এলাকায় আলোচনা-সমালোচনা চলছে।
বিয়ের ৬ মাসের মধ্যে শশুর বাড়ী থেকে লাশ হয়ে ফিরলো নববধু জাকিয়া সুলতানা। স্বামী পরিবার বিষয়টিকে আত্মহত্যা বলে দাবী করছে, তবে জাকিয়ার বাবার পরিবারের দাবী এটি হত্যাকান্ড। আলোচীত এই আতœহত্যার রহস্য উন্মোচনে সকলের দৃষ্টি এখন ময়না তদন্ত রিপোর্টের দিকে।

দাকোপ উপজেলা সদর পানখালী ইউপির হোগলা বুনিয়া গ্রামের গোলাম রসুল শেখের কন্যা জাকিয়া সুলতানা (২০)। ৬ মাস আগে পারিবারিক ভাবে বিয়ে হয় উপজেলার কামারখোলা গ্রামের রুহুল আমিন গাজীর পুত্র খানজাহান গাজীর সাথে। বিয়ের পর থেকে সুখেই কাটছিলো তাদের দাম্পাত্য জীবন। প্রতিবেশীদের ভাষ্য স্বামী শশুর শাশুড়ী নিয়ে হাসি আনন্দেই ছিল নববধু জাকিয়া। এরই মাঝে গত ৪ সেপ্টেম্বর সকালে জামাই খানজাহান মোবাইল ফোনে জাকিয়ার পিতা গোলাম রসুল শেখকে জানায় জাকিয়া গুরুত্বর অসুস্থ, তাকে উপজেলা হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে। রসুল শেখ হাসপাতালে এসে জানতে পারে তার মেয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আতœহত্যা করেছে এবং ডাক্তার মৃত্যু ঘোষনা করায় স্বামী খানজাহানের পরিবার লাশ নিয়ে তাদের বাড়ীতে ফিরে যাচ্ছে। পথি মধ্যে গোলাম রসুল ট্রলার ঘুরিয়ে মেয়ের লাশ গ্রহন করে।

বিষয়টি সে তাৎক্ষনিক দাকোপ থানা পুলিশকে জানালে পুলিশ এসে লাশের প্রাথমিক সুরতহাল এবং ময়নাতদন্ত শেষে জাকিয়ার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে। রসুল শেখসহ তার পরিবারের অভিযোগ আমরা হাসপাতালে পৌছানোর আগেই কেন, তারা তড়িঘড়ি করে লাশ নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করল, ঝুলন্ত মৃত দেহ কেন পিতা পুত্র ছাড়া পুলিশ বা অন্য কাউকে দেখার সুযোগ দেওয়া হলনা ? তাদের দাবী জাকিয়ার মুখ এবং শরীরের একাধীক স্থানে লালচে দাগের চিহ্ন ছিল। তবে খানজাহানের পরিবার এমন চিহ্ন থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেছে। স্থানীয় সাংবাদিকেরা সরেজমিন আতœহত্যার ঘটনাস্থলে গেলে জানা যায়, ঘটনার দিন সকাল ৭ টার দিকে স্বামী খানজাহান ধান ক্ষেতে যায়। একই সময় তার পিতা রুহুলামিন গাজী পুত্রবধু জাকিয়ার দেওয়া ভাত খেয়ে পুকুরে মাছ মারতে যায়। এরই মাঝে খানজাহান বাড়ী ফিরে ঘরের দরজা বন্দ দেখে জানালা দিয়ে দেখতে পায় জাকিয়া ওড়নায় ফাঁস দিয়ে ঘরের আড়ার সাথে ঝুলছে। তখন সে লাথি মেরে দরজা খুলে চিৎকার দিয়ে বাবাকে ঘরে ডেকে নিয়ে তার সহযোগীতায় জাকিয়ার দেহ নামায়। পরবর্তীতে প্রতিবেশী স্বজনদের সহায়তায় ট্রলার যোগে উপজেলা হাসপাতালে নেওয়া হলে ডাক্তার মৃত্যু ঘোষনা করে।

তবে কাঠের ফ্রেম টিনের যে দরজায় লাথি মেরে খোলার দাবী তারা করেছে সেখানে দরজার ছিটকানি বা অন্য কোন অংশে সামান্যতম ক্ষতির কোন চিহ্ন দেখা যায়নি। এ ব্যাপারে খানজাহানের সাথে কথা বলার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। বাড়ীতে থাকা তার পিতা রুহুলামিন গাজী এবং প্রতিবেশী ও স্বজনদের সাথে কথা বলে জানা যায়, মৃত্যুর পূর্ব মুহুর্ত পর্যন্ত তাদের স্বামী স্ত্রী বা সংসারে কোন ধরনের ঝগড়া বিবাদের কথা কেউ কখন শুনেনি। এমনকি ওই রাতেও স্বামী স্ত্রী একসাথে স্বাভাবিক ভাবে ছিল। জানা যায় ঘটনার ২ দিন আগে জাকিয়ার শাশুড়ী তার একমাত্র জামাই চালনা পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ড আনান্দ গ্রামের কামরুলের বাড়ীতে যায়। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তিনি সেখানেই ছিল।

গোলাম রসুলের মেয়ে জাকিয়া সুলতানা ছিল খানজাহানের দ্বিতীয় স্ত্রী। আত্মহত্যা সর্ম্পকে জানতে চাইলে দাকোপ থানার ওসি তদন্ত আশরাফুল ইসলাম বলেন, মৃতের পিতা গোলাম রসুল প্রাথমিকভাবে একটি অপমৃত্যু মামলা করেছেন। তবে ময়না তদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পর সে অনুযায়ী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। মৃতের পরিবার এবং স্বজনদের দাবী তাকে হত্যা করা হয়েছে। ওই সময়ে খানজাহানের কল লিষ্টের কথোপকথোন প্রকাশ পেলে রহস্য উন্মোচন হবে এমন দাবী তাদের।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..




© All rights reserved 2018 Banglarnayan
Design & Developed BY ThemesBazar.Com