মঙ্গলবার, ০৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০১:৫৭ পূর্বাহ্ন
মো.তারিকুল ইসলামঃ গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর পৌরসভার নির্বাচন নিয়ম অনুযায়ী আগামী এপ্রিল মাসে হওয়ার কথা। কিন্তু পবিত্র রমজান মাসের কারনে এ নির্বাচন হয়তো কয়েক সপ্তাহ পিছিয়ে মে মাসের শেষ দিকে অথবা জুনের মাঝামাঝি হবে তা নিশ্চিত করেই বলা যায়। পৌরসভার নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ও স্বতন্ত্র সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থীরা এবং কাউন্সীলর প্রার্থীরা মাঠে নেমে গনসংযোগ শুরু করেছেন বেশ কিছুদিন আগে থেকেই।
বিগত নির্বাচনে উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এ্যাড.আতিকুর রহমান মিয়া আওয়ামীলীগের মনোনয়ন পেয়ে বিপুল ভোটের ব্যবধানে মুকসুদপুর পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হন। এ বছর আওয়ামীলীগ থেকে মনোনয়ন নিয়ে মুকসুদপুর পৌরসভার মেয়র হতে বেশ কয়েকজনকে দলের উচ্চ পর্যায়ে দৌড়ঝাপ করতে দেখা যাচ্ছে। দলীয় প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে আসতে এ্যাড. আতিকুর রহমান মিয়া আপ্রান চেষ্টা করবেন তা ধরেই নেয়া যায়। বর্তমান মেয়র এ্যাড. আতিকুর রহমান মিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এবং দীর্ঘদিন যাবৎ মুকসুদপুর প্রেসকাবের সভাপতি হিসাবেও দায়িত্ব পালন করছেন। এই রাজনীতিক নেতা বয়সে প্রবীন হলেও,কর্মক্ষেত্রে এখনও তিনি বেশ সচল। উপজেলা সদরে তার যেমন ব্যাপক পরিচিতি রয়েছে তেমনি প্রবীণ হিসাবে সকলেই তাকে সম্মানের চোখে দেখে। রাজনীতির পাশাপাশি যৌবনে তিনি একজন ভাল ফুটবল খেলোয়াড়ও ছিলেন।
উপজেলা আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী সদস্য মো. হুজ্জাত হোসেন লিটু জানান, ১৯৮০ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত একটানা ৪১ বছর জাতীর জনক বঙ্গবন্ধুকে ভালবেসে ও আওয়ামীলীগের আদর্শের প্রতি অবিচল থেকে দলের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। তার এই ৪১ বছরের ভূমিকাকে বিচার করে দল তাকেই মনোনয়ন দিবে এমন প্রত্যাশা তার। ১৯৮০ সালে স্কুল ছাত্রলীগের সভাপতি হিসাবে ছাত্র রাজনীতি করে আওয়ামীলীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। ১৯৮৩ সালে উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে ১৯৮৮ পর্যন্ত উপজেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক কাঠামোকে শক্তিশালী করতে ভূমিকা রাখেন। ১৯৯৭ সালে তিনি ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হয়ে কৃতিত্বের সাথে ছাত্রলীগকে সুসংগঠিত করেন। ২০০৩ সালে মূলদল উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ন-সম্পাদক হয়ে ব্যাপক সাংগঠনিক ভূমিকা রাখেন। বর্তমানে উপজেলা আওয়ামীলীগের সদস্য হিসাবে প্রতিটি কর্মসূচীকে সফল করতে দর্শনীয় ভূমিকা রেখে চলেছেন। সদ্য সমাপ্ত ইউপি নির্বচনেও তিনি দলের পক্ষে ব্যাপক ভুমিকা রাখেন। মুকসুদপুর প্রেসকাবের সাধারণ সম্পাদক হিসাবে তিনি স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে একজন প্রিয় ব্যক্তিত্ব। দল তাকে মেয়র পদে মনোনয়ন দিলে সেখানেও তিনি সফল হবেন এমন প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
আওয়ামীলীগের সমর্থন নিয়ে ২০০৯ সালে তিন বছর মেয়াদের উপজেলা কেন্দ্রীয় সমবায় সমিতি ইউসিসি’র নির্বাচিত সাবেক চেয়ারম্যান আমিনুর রহমান পল্টু আগামী পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামলীগের মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচন করতে দলের নেতাদের সমর্থন পেতে চেষ্টা করছেন। তিনি জানান,১৯৮৪ থেকে তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত হন। ১৯৮৫ সালে মুকমুদপুর পাইলট হাই স্কুলে ছাত্রলীগ কমিটির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান। ১৯৮৯ সাল থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত মুকসুদপুর ছাত্রলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ছিলেন। এসময় তিনি ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসাবেও কিছুদিন দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯১ থেকে ২০০১ পর্যন্ত মুকসুদপুর ছাত্রলীগের যুগ্ন সম্পাদক ছিলেন বলে তিনি জানান। ২০০১ সাল থেকে তিনি যুবলীগের একনিষ্ঠ কর্মী হিসাবে দলীয় কর্মসূচীতে সম্পৃক্ত হন। বর্তমানে তিনি উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সম্পাদকের নির্দেশ অনুযায়ী দলীয় সকল কর্মসূচী পালন করে আসছেন। এছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িত থেকে সহযোগিতা করে আসছেন বলে তিনি জানান। তার সার্বিক কর্মকান্ড বিবেচনায় এনে দল তাকে মনোনয়ন দিবে আশা প্রকাশ করেছেন আমিনুর রহমান পল্টু।
মুকসুদপুর পৌর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক লুৎফার রহমান মোল্যাও পৌর নির্বাচনে মেয়র পদে মনোনয়ন চাইবেন বলে মোবাইল ফোনালাপে জানিয়েছেন। ছাত্রলীগের পরে তাকে উপজেলা কৃষকলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব দেয়া হয়। কৃষকলীগের কমিটি ভেঙ্গে গেলে কমিটির আহবায়ক হিসাবে তিনি দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি পৌর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক। সংসদ সদস্য মু.ফারুক খানের স্নেহধন্য পৌর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক লুৎফার রহমান মোল্যা জানান,ছাত্র জীবন থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত দল থেকে অর্পিত সকল দায়িত্ব যথাযথ পালন করে আসছি। নিজ এলাকায় তার বেশ জনপ্রিয়তা রয়েছে। দলের জন্য তার বিগত দিনের অবদানকে বিবেচনায় এনে আগামী পৌরসভা নির্বাচনে দল তাকেই মনোনয়ন দিবে এমন প্রত্যাশা করেন তিনি।
বিগত পৌর নির্বাচনে পাঁচজন প্রতিদ্বন্দির মধ্যে দ্বিতীয় হয়েছিলেন মিজানুর রহমান মন্টু মৃধা। আগামী নির্বাচনে তিনি নৌকা প্রতিক পেতে দলীয় হাই কমান্ডের কাছে দৌড়ঝাপ করছেন। ঠিকাদার মন্টু মৃধা ছাত্র জীবনে মুকসুদপুর কলেজ ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন এবং পরবর্তিতে ছাত্রলীগের সমর্থন নিয়ে মুকসুদপুর কলেজ ছাত্র সংসদের জিএস নির্বাচিত হন। এরশাদ সরকারের আমলে ১৯৮৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট ডাকাতি ঠেকাতে মুকসুদপুর কলেজ কেন্দ্রসহ আরো তিনটি কেন্দ্রে ব্যাপক ভূমিকা রাখেন। তার এমন দুঃসাহসিক কাজের কারনে পুলিশের হাতে বেধড়ক মারপিটের শিকার হতে হয়। আবেগতাড়িত কন্ঠে তিনি জানান,দলের জন্য বারবার জীবনের ঝুকি নিয়ে কাজ করেছি। আগামীতেও দলের জন্য কাজ করে যাব। আমাদের সে ত্যাগের সামান্যতম মূল্যায়ন হলেই আমরা খুশী। আশা প্রকাশ করে মিজানুর রহমান মন্টু মৃধা বলেন,আগামী পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামীলীগ থেকে আমাকে মনোনয়ন দেয়া হবে বলে আমার দৃঢ় আস্থা রয়েছে।
উপজেলা আওয়ামীলীগের যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক মো.বরকত খান নির্বাচনী গনসংযোগ চালিয়ে আসছেন বেশ কিছুদিন আগে থেকেই। ইতিমধ্যেই তিনি রঙ্গীন পোষ্টার লাগিয়ে ও হ্যান্ডবিল বিলিয়ে নির্বাচনী প্রচার চালিয়ে আসছেন। লেখাপড়া শেষ করে তিনি ইটালী চলে যান। প্রবাসে থেকেও তিনি ইটালীর আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলে জানাযায়। ২০১৮ সালে স্থায়ীভাবে দেশে এসে উপজেলা আওয়ামীলীগের যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। মুকসুদপুর পাইলট বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি ও উপজেলা আওয়ামীলীগের নেতা মো.বরকত খান জানান, পৌরসভা নির্বাচনে দল থেকে তাকেই মনোনয়ন দেয়া হবে বলে তিনি আশা করছেন।