রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:১০ পূর্বাহ্ন
গত ৫ আগস্টের পর থেকে সব টিভি চ্যানেল ‘বিটিভিতে’ রূপান্তিত হয়েছে। হাতে গোনা দু’একটি বাদে প্রায় সব সংবাদমাধ্যম নতুন সরকারের প্রতি দারুণ ‘আবেগে’ ভাসছে। সেই সঙ্গে বিগত সরকারের প্রতি প্রবলভাবে ‘ঘৃণা’ বোধ করছে। যা নিজস্ব মেরুদণ্ডে শক্তভাবে দাঁড়ানোর বিপরীতে আগের চরিত্রেরই পুনরাবৃত্তি।
জন্মের পর থেকে দেশের মৌলিক সমস্যা মূলত, ‘সময় উপযোগী মানুষ তৈরি না করা’। সুপরিকল্পিত ছকে ভবনসর্বস্ব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রশ্নহীন, গবেট, স্বার্থপর মানুষ তৈরি করে, উন্নয়নের মূলো ঝুলিয়ে শাসন-শোষণ জারি রাখাই ছিল বিগত রাজনৈতিক দল শাসিত সরকারগুলোর মিশন-ভিশন।
এক্ষেত্রে রাজনীতির বাইনারি দৃষ্টিভঙ্গিতে বুঁদ হয়ে থাকা সংবাদমাধ্যমের বড় কর্তারা পক্ষের সরকারের এমন মিশন-ভিশনকে সফল করতে অকাতরে দেশপ্রেম বিসর্জন দিয়ে গেছেন। সেই সঙ্গে নিজস্ব নীতি ও যৌক্তিকবোধের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে হাজার হাজার গণমাধ্যম সংগঠন গড়ে তুলে শুধুই নিরোর বাঁশি বাজিয়েছেন।
দশকের পর দশক ধরে ‘কিংবদন্তি’ তথাকথিত সংবাদনায়কেরা স্ব স্ব রাজনৈতিক ঘৃণাবাদকে জাতিগত ঘৃণাবাদে পরিণত করে জাতীয় ঐক্যকে পায়ে পিষেছেন। ফলে রাজনৈতিক দলগুলোকে সংস্কারমুখী করানোর দায় তারা কখনই বোধ করেননি। সংবাদমাধ্যমের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি বা লেন্সের আধুনিকায়নের পথেও হাঁটেননি কখনও।
গত কয়েক দশক ধরে ক্ষমতার পালাবদলে সুযোগের শর্তে সংবাদমাধ্যমের কর্তারা দানব হয়ে ওঠা অপরাজনীতির অন্ধকারে আলো ফেলা বড় বড় প্রতিবেদনই শুধু প্রকাশ করে গেছেন, সিস্টেম বদলে প্রতিবেদন তৈরির পথ করতে পারেননি। ফলে প্রচলিত রাজনীতির মুখস্ত কাহিনি-বয়াননির্ভর শত শত, হাজার হাজার প্রতিবেদন পড়ে পাঠক শুধু আঁতকেই উঠেছেন, স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়তে পারেননি।
একবিংশ শতকে বিশ্বকে তাক লাগানো জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের প্রায় তিন মাসেও তাই, রাজনীতির মেঘহীন আকাশ পাইনি এখনও। বরং আগস্ট থেকে শিক্ষা না নিয়ে রাজনীতি হাঁটছে আগের পথেই। সংবাদমাধ্যমও রাজনীতির সংস্কারে প্রচলিত লেন্সের আধুনিকায়নের মাধ্যমে রোডম্যাপ তৈরির বদলে বন্দনাগীতি জারি রেখেছে।
রাজনীতির প্রবলমাত্রার বাইনারি দৃষ্টিভঙ্গির মাঝারি গোত্রীয় সাংবাদিকরা দিনরাত সামাজিক মাধ্যমে লাফাচ্ছেন, গলা ফাটাচ্ছেন। এদের না আছে রাজনৈতিক বিশ্লেষণী উদার দৃষ্টিভঙ্গি, না আছে যৌক্তিক বোধ, না আছে লক্ষ্য, না আছে আত্মসমালোচনা। এদের কারণেই বার বার ছন্দ হারাচ্ছে সংবাদমাধ্যমের সংস্কার আকাঙ্ক্ষা।
নিয়ন মতিয়ুল, লেখক ও সাংবাদিক।