শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৩০ পূর্বাহ্ন
গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি:
গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে দাফনের ৬ মাস পর জ্যোতি হীরা ওরফে সোহাগী নামে এক গৃহবধূর মৃতদেহ কবর থেকে উত্তোলন করা হয়েছে।
গতকাল রবিবার বিকালে গোপালগঞ্জের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মোখলেসুর রহমান সরকারের নির্দেশে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অমিত রায়ের উপস্থিতিতে মুকসুদপুর উপজেলার কলিগ্রামে কবর থেকে ওই গৃহবধূর মৃতদেহ তোলা হয়। পরে মৃতদেহ থেকে নমুনা ুসংগ্রহ করে ময়না তদন্তের জন্য গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে মর্গে পাঠানো হয়েছে। নিহত গৃহবধূ জ্যোতি হীরা সোহাগী মুকসুদপুর উপজেলার কলিগ্রামের জ্যাকব হীরার মেয়ে। মামলার বিবরণে জানাগেছে, কলিগ্রামের আদ্বিত্য রায়ের ছেলে অচিন্ত রায় একই গ্রামের জ্যাকব হীরার মেয়ে জ্যোতি হীরা ওরফে সোহাগীকে ২০১৮ সালের আগষ্ট মাসে বিয়ে করে।
পরপর তারা ঢাকার মিরপুরে ভাড়া বাসায় বসবাস শুরু করে। বিয়ের কয়েক দিন পর স্বামী অচিন্ত রায় স্ত্রী সোহাগীর কাছে ৫ লাখ টাকা যৌতুক দাবী করে। জ্যোতি হীরা টাকা এনে দিতে নিতে অস্বীকার করায় স্বামী তার ওপর শারীরিক নির্যাতন শুরু করে। স্বামীর নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে সোহাগী ঢাকা থেকে বাবার বাড়ি কলিগ্রামে চলে আসে। সোহাগীর বাড়িতে এসে স্বামী ও তার বাড়ির লোকজন যৌতুকের টাকা চায়। সোহাগীর বাবা টাকা দিতে অস্বীকার করলে স্বামী ও শ্বশুর বাড়ির লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে সেখানেই তাকে মারপিট করে মারাতœক আহত করে। সংকটজনক অবস্থায় সোহাগীকে তারা জোর করে ঢাকায় নিয়ে যায়।
সেখানে তার অবস্থার আরো অবনতি ঘটলে তাকে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিসাধীন অবস্থায় গত বছরের ২১ সেপ্টেম্বর সোহাগী মারা যায় । পরে তার মৃতদেহ বাড়িতে নিয়ে আসলে সোহাগীর স্বামীর পরিবারে পক্ষ থেকে বিচার সালিশ করে দেয়ার আশ্বাস দেয়া হয়। লাশ দাফনের পর বিচার সালিশ নিয়ে তালবাহানা শুরু করে সোহাগীর স্বামীর পরিবার। অবশেষে জ্যোতির বাবা জ্যাকব হীরা গোপালগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে গত বছরের ২৮ নভেম্বর অচিন্ত রায় আদ্বিত্য রায়, যোগেশ রায় ও অন্তরা রায়ের বিরুদ্ধে একটি নালিশী পিটিশিন দায়ের করেন। আদালত বাদীর পিটিশনটি আমলে নিয়ে মুকসুদপুর থানার ওসিকে এফআইআর করার নির্দেশ দেয়। মুকসুদপুর থানার ওসি মামলাটি এফআইআর করেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও মুকসুদপুর থানার এসআই নব কুমার ঘোষ বলেন, আদালতের নির্দেশে থানায় মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। তদন্তের জন্য মৃতদেহের ময়না তদন্ত প্রয়োজন পড়ে। এ ব্যাপারে গোপালঞ্জের জেলা ম্যাজিষ্ট্রেটের কাছে লাশ উত্তোলনের আবেদন করা হয়। অবেদন বিজ্ঞ ম্যাজিষ্ট্রেট মঞ্জুর করেন। রবিবার নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট অমিত রায়ের উপস্থিতিতে কবর থেকে ওই গৃহবধূর মৃতদেহ উত্তোলন করা হয়। ময়না তদন্তের জন্য মৃতদেহ থেকে নমুনা সংগ্রহ করে গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।