বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:২৫ অপরাহ্ন
জিএম,আজম, দাকোপ (খুলনা) প্রতিনিধি:
সুপেয় খাবার পানির প্রত্যাশায় আর প্রহর গুনতে হবে না চালনা পৌরবাসীর। খুলনার চালনা পৌরসভায় প্রায় ৫ হাজার পরিবারের ৩৫ হাজার জনসাধারণের জন্য বিশুদ্ধ খাবার পানির টিট্রমেন্ট প্লান্ট নির্মাণ কাজ দ্রুত এগিয়ে চলায় পৌরবাসীর মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে। আগামী বছরের শুরুতেই প্রতিটি বাড়ি বাড়ি পাইপ লাইনের মাধ্যমে এ বিশুদ্ধ খাবার পানি পৌঁছিয়ে দেওয়া হবে।
উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী জয়ন্ত মল্লিক জানান, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর কর্তৃক দেশে ৩২ শহরের পানি সরবরাহ স্যানিটেশন ও মানব বর্জ নামে একটি প্রকল্পের আওতায় খুলনার দাকোপ উপজেলা সদর চালনা পৌরসভায় পাইপ লাইনের মাধ্যমে প্রতিটি বাড়ি বাড়ি বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহের লক্ষে ২০২০ সালের মার্চ মাসে দরপত্রের আহবান করা হয়। চালনা পৌরসভায় এ প্রকল্পটি সম্পন্ন করতে ব্যয় ধরা হয়েছে ২২ কোটি ৭০ লাখ টাকা। মেঘা এ প্রকল্পের কাজটি পেয়েছেন মেঘনা স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং লিঃ কোম্পানি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।
কাজটি বাস্তবায়নের জন্য উক্ত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান গত ২০২০ সালের জুলাই মাসের শুরুতে কাজ শুরু করেন এবং ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে কাজটি সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান এ প্রকল্পের কাজটি দ্রæত সম্পন্ন করার লক্ষ্যে দীর্ঘ প্রায় ৫ কিলোমিটার দুরে ভদ্রানদী থেকে পাইপ লাইনের মাধ্যমে পানি ট্রিটমেন্ট প্লান্টের ট্যাঙ্কিতে রিজার্ভ করে তা শোধন করে জনগণের মাধ্যম বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহ করা হবে।
একই সাথে প্রকল্পটির আওতায় পৌর এলাকার সকল ওয়ার্ডে পাইপ লাইনে হাউজ কানেকশন ড্রেন,মানব কঠিন বর্জ,মানব বর্জ কমিউনিটি ও পাবলিক টয়লেটসহ সর্বপরি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টের কাজ বাস্তবায়ন হবে। এ ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট থেকে প্রতি ঘন্টায় ২লাখ লিটার পানি জনসাধারণের মাঝে সরবরাহ করা যাবে। প্রকল্পের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলায় এবং সুপেয় খাবার পানি পাওয়ার আশায় পৌরবাসীর মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে।
চালনা পৌরসভার ২নং ওয়ার্ড বাসিন্দা বিশিষ্ট আইনজীবী এ্যাডঃ সুকল্যান বিশ্বাস বলেন, ভৌগলিক কারনে দাকোপ উপজেলাটি সমুদ্র উপকুলীয় হওয়ায় এখানে প্রতিটি নলকুপের পানি লবণাক্তা থাকে। গভীর নলকূপ কোথাও কার্যকারি না হওয়ায় উপজেলা বাসীর পাশাপাশি পৌরবাসীদের লবণাক্ত পানির সাথে নিরন্তর লড়াই করে জীবন জীবীকা নির্বাহ করতে হয়। বিশেষ করে খাবার পানির উৎসহ অধিকাংশ পুকুর গুলো ফাল্গুন চৈত্র মাসে সুকিয়ে যাওয়ায় বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট চরমে পৌছায়। বাধ্য হয়ে পৌরবাসী টিউবওয়েলের লবণ পানির পাশাপাশি স্থানীয় পুকুর গুলোতে শ্যাওলা ও দুরগন্ধ যুক্ত পানি সংগ্রহ করে তা খেতে বাধ্য হতে হচ্ছে।
এ কারণে অনেককে আবার অধিক মুল্যদিয়ে বহিরাগত উপজেলা থেকে পানি সংগ্রহ করে পান করতে হয়। পৌর জনগণের মাঝে সুপেয় বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহের জন্য পৌরসভা চত্বরে ট্রিটমেন্ট প্লান্টের কাজ দ্রæত এগিয়ে চলায় পৌরবাসীর মাঝে স্বস্তি ফরে এসেছে। আমার মতে এটা বাস্তবায়ন হলে পৌরবাসীর খাবার পানির সাথে সাথে রান্নাবান্না ও গোসল করার সমস্যা আর থাকবে না।
চালনা পৌরসভার একাধিক হোটেল, রেষ্টুরেন্ট ব্যবসায়ীরা বলেন, সুপেয় খাবার পানির সমস্যা পৌরবাসীর দীর্ঘদিনের। এ সমস্যা সমাধানে কেউ এগিয়ে না আশায় বাধ্য হয়ে আমাদেরকে টিউবওয়েলের লবণাক্ত পানির পাশাপাশি পুকুরের পানি সংগ্রহ করে খাওয়া ও রান্নাবান্নার কাজে ব্যবহার করতে হয়। আবার অনেক সময় ফাল্গুন চৈত্র মাসে পুকুরের পানি সুকিয়ে যাওয়ায় তখন বহিরাগত উপজেলা থেকে অধিক মুল্যদিয়ে বিশুদ্ধ খাবার পানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে। বর্তমানে চালনা পৌরসভায় বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট মোকাবেলায় প্লান্ট নির্মানের কাজ দ্রæত এগিয়ে চলায় আমরা ব্যবসায়ীরা আশার আলো দেখতে পাচ্ছি এবং ব্যবসায় লাভবান হবো। শুধু হোটেল ব্যবসায়ী নয় পৌরসভা চত্বরে সুপেয় খাবার পানির ট্রিটমেন্ট প্লান্টের কাজ এগিয়ে চলায় দীর্ঘ বছরের স্বপ্ন পুরণ হতে চলেছে পৌরবাসীর।
চালনা পৌর মেয়র সনত কুমার বিশ্বাস বলেন, বিগত পৌর নির্বাচনে আমার প্রতিশ্রুতি ছিলো পৌরবাসীদের বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহ ও শহর রক্ষাবাঁধ নির্মাণ। তারই ধারাবাহিকতায় ২২ কোটি ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ে গোটা পৌরসভায় পাইপ লাইনের মাধ্যমে প্রতিটি বাড়ি বাড়ি ও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে বিশুদ্ধ ও সুপেয় খাবার পানি সরবরাহের লক্ষে ওয়াটার ট্রিটসেন্ট প্লান্ট নির্মাণ ও পাইপ লাইনের কাজ দ্রæত এগিয়ে চলেছে। আশাকরছি আগামী বছরের শুরুতে পৌরবাসী এ সুপেয় পানি পাওয়ার আওয়তায় আসবে। তখন আর খাবার পানির পাশাপাশি রান্নাবান্না ও গোসল করার জন্য পানির সমস্যা থাকবে না। এ ছাড়া চালনা শহর রক্ষাবাঁধ নির্মাণের জন্য প্রকল্প দেওয়া হয়েছে সেটাও পৌরবাসী খুব শিঘ্রই কাজ দেখতে পাবে।#