সোমবার, ০৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৫:১০ পূর্বাহ্ন
বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং স্থানীয় নির্বাচন বিশ্লেষন করলে প্রেক্ষাপট ও পরিবেশের মধ্যে বেশ কিছু ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের ভীত শক্ত থাকলেও, স্থানীয় নির্বাচনে দলীয় প্রতিক থাকা সত্তেও ফলাফল অনেক সময় হতাসা জনক হয়ে থাকে। বিগত কয়েকটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং স্থানীয় নির্বাচনে এমন ভিন্নতার প্রমান পাওয়া গেছে। যা ক্ষমতাসীন দলকে হতাস করেছে।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলির কেন্দ্রীয় সর্বোচ্চ স্তর থেকে গ্রাম পর্যায়ের অর্থাৎ তৃণমূল পর্যায়ের সকল নেতা,কর্মী এবং সমর্থকগন দলের সিদ্ধান্তকে অবনত মস্তকে মেনে নিয়ে নির্বাচনী মাঠে ঝাপিয়ে পড়েন। উচ্চ পর্যায় থেকে তৃণমূল পর্যন্ত নেতাদের মধ্যে কোন মতপার্থক্য থাকলেও জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় সকল মতবিরোধ আপনা আপনি নিরসন হয়ে যায়। নিজের ইচ্ছে বা আকাঙ্খাকে ছাপিয়ে দলের স্বার্থই বড় হয়ে সকলের সামনে আবির্ভূত হয়। সকলেরই লক্ষ্য থাকে দলের মধ্যে নিজের বর্তমান অস্তিত্বকে রক্ষা করে আরো একটু উপরে উঠার। সে লক্ষ্য পূরণের জন্য সকল নেতা কর্মী নিজ এলাকায় দলের জন্য নিরলসভাবে কাজ করে আপন এলাকায় নিজস্ব জনপ্রিয়তা দলের কাছে প্রমানের চেষ্টা করে থাকেন। প্রয়োজনে নিজের গাঁটের অর্থ ব্যয় করতেও দ্বিধা করেন না। নির্বাচনী ফলাফল যাই হোকনা কেন,নির্বাচন কালিন সময় সাধারণ ভোটারদের কাছে দলের প্রভাব যেমন বৃদ্ধি পায় তেমনি দলও হয় সংগঠিত। ভোটের দিনে ভোটারের চেয়ে প্রার্থী এবং দলের সন্তুষ্টি অর্জন করাই হয় তাদের প্রধান লক্ষ্য। অতএব,যে কোন প্রকারেই হোক ভোট বাক্স ভর্তী করতে তারা দ্বিধা করেন না। যা জনগন খুব একটা ভাল মনে গ্রহন করেনা।
অপরদিকে স্থানীয় নির্বাচন,বিশেষ করে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন। কোন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে একটি আসনে হাফ ডজন বা তারও অধিক প্রার্থী দলীয় মনোনয়ন পেতে বিভিন্ন পন্থায় চেষ্টা তদবির করে থাকেন। আগ্রহী প্রার্থীরা সবাই যোগ্য না হলেও একাধিক যোগ্যতা সম্পন্ন প্রার্থী যে থাকেন তা নিশ্চিত করেই বলা যায়। দল যেহেতু একজনকেই মনোনয়ন দেয়,সেহেতু অন্য প্রার্থীদের অনেকেই অসন্তষ্টি নিয়ে ক্ষোভে ভিন্ন রাস্তা বেছে নেন। কেউবা অন্য দলের প্রার্থীর পক্ষে অথবা স্বতন্ত্র প্রার্থীকে সমর্থন দিয়ে না পাওয়ার ব্যর্থতার আক্রোস ঝাড়েন। আবার অনেকে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে ভোটযুদ্ধে নেমে পড়েন। এলাকার নেতাদের মধ্যে এমন বিভক্তির কারনে দলের সমর্থকরাও বিভক্ত হয়ে যায়,ফলে কোন প্রার্থী তার একক ইচ্ছানুযায়ী প্রভাব খাটিয়ে ভোটের বাক্স ভরতে পারেন না। জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে সম্পর্কের বন্ধন কোন গুরুত্ব না পেলেও এসব স্থানীয় নির্বাচনে আত্মিয়তার বন্ধন এবং ব্যক্তিগত সম্পর্ক প্রাধান্য পায়। এসব নির্বাচনে দলের প্রভাব স্তিমিত হয়ে ব্যক্তি সম্পর্কের প্রভাব বিস্তার লাভ করে। নিজেদের মধ্যে বিভক্তির ফলে কোন দলের কর্মীরাই তাদের নিজ দলের প্রভাব এককভাবে প্রয়োগ করতে পারেনা। ফলে দেখা যায়, ক্ষমতাসীন দলের অনেক প্রভাবশালী নেতা তার চেয়ে কম প্রভাবশালী প্রার্থীর কাছে বিপুল ভোটে পরাজিত হন, এতে দলের ভাবমূর্তী কিছুটা হলেও ম্লান হয়ে পড়ে। বিগত কয়েকটি স্থানীয় নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের বেশ কিছু প্রভাবশালী প্রার্থীরা জয়ের মালা পরতে না পারা এর জ্বলন্ত প্রমান। আগামীতে স্থানীয় এসব নির্বাচনের পরিবেশ সুষ্ঠু ও স্বাভাবিক থাকলে এ প্রবনতা আরো বাড়বে বই কমবে বলে মনে হয়না।