শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১১:১৯ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম:
পরিবার পরিজন নিয়ে এখন ভালই আছেন স্বর্ণালী

পরিবার পরিজন নিয়ে এখন ভালই আছেন স্বর্ণালী

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধিঃ

স্বর্ণালী বিশ্বাস (৩০)। স্বামী, এক মেয়ে, শ্বশুর, শ্বাশুড়ী আর প্রতিবন্ধি ভাসুর নিয়ে তার পরিবার। স্বামী নিতাই বিশ্বাস পেশায় একজন কাঠ মিস্ত্রী। সারা দিনের উপার্জিত অর্থ দিয়ে কোন রকমে চলছিল সংসার। তবে ভূমিহীন হওয়ায় ঠাঁয় হয়েছে কোটালীপাড়া উপজেলার দেবগ্রাম আশ্রায়ণ প্রকল্পে। এতে কিছুটা অর্থিক কষ্ঠ লাঘব হলেও স্বাচ্ছন্দ্য আসছিল না।

তবে এবার হস্ত কুটির শিল্পে কাজ করে এক একটি মাফলার তৈরী করে প্রতিদিন পাচ্ছেন থেকে দুই’শ থেকে চার’শ টা। এতে মাস প্রতি আয় হচ্ছে ৫ হাজার থেকে ৭ হাজার টাকা। ফলে পরিবারে এসেছে আর্থিক স্বচ্ছলতা। পরিবার পরিজন নিয়ে এখন ভালই আছেন স্বর্ণালী।

গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার দেবগ্রাম আশ্রায়ন প্রকল্পে গিয়ে দেখা গেছে, দেবগ্রামে ভূমিহীন পরিবারগুলোর জন্য গড়ে তোলা হয় একটি আদর্শ আশ্রয়ণ প্রকল্প। এ প্রকল্পে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার দেয়া ঘর পান ভূমিহীনরা। এ আশ্রয়ণ প্রকল্পে রয়েছে বই পড়ার জন্য লাইব্রেরী, শিশুদের জন্য খেলার সরঞ্জামসহ মাঠ। তবে এবার এখানকার আশ্রিত নারীদের জন্য সৃষ্টি করা হলো কর্মসংস্থানের সুযোগ।

শনিবার (২৯ জানুয়ারী) মুজিব শতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে উপজেলা প্রশাসন ও বাংলাদেশ ইয়ূথ ফার্স্ট কনসার্ন্স এর উদ্যোগে আশ্রয়ণ প্রকল্প চত্ত্বরে সুবিধাবঞ্চিত নারীদের উৎপাদিত পণ্যের ব্রাইন্ডং উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা। এসময় কোটালীপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌস ওয়াহিদসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

আশ্রয়ন প্রকল্প চত্ত্বরে কর্মহীন ২১ জন ও ৩৩ জন উপজাতি নারীরা তৈরী করছেন মাফলার, চাঁদর ও বউ টুপি। ইতোমধ্যে তারা ৭৪ পিচ মাফলার, ৩০ পিচ চাঁদর ও ৯৬ পিচ বউ টুপি তৈরী করেছেন। প্রতিটি মাফলার পাঁচশত, চাঁদর এক হাজার ও বউ টুপি তিনশ টাকা দরে এলাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। পারিশ্রমিক হিসেবে মাফলারের জন্য ২’শ, চাঁদরের জন্য ৪’শ আর বউ টুপির জন্য পাচ্ছেন একশত টাকা। পরে তাদের তৈরী এসব পণ্য স্থানীয় বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে।

কর্মজীবী এসব নারীদের হস্তশিল্পে প্রশিক্ষণ দিয়েছে বাংলাদেশ ইয়ূথ ফার্স্ট কনসার্ন্স এর কোটালীপাড়ার মেয়ে ক্রস্টিনা দাস নদী ও খাগড়াছড়ির দিপ্তী রানী ত্রিপুরা।

আশ্রায়ন প্রকল্পের বসবাস করা মিতালী হালদার ও নাজমা বেগম বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমাদের আশ্রায়স্থল দিয়েছেন। আবার আয়বৃদ্ধির জন্য মাফলার, চাঁদর ও টুপি বুনানোর জন্য প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। আগে আমাদের খুব খারাপ দিন গেছে। এখন আমাদের থাকার জায়গা হয়েছে সেই সাথে সংসারের স্বচ্ছলতার জন্য আয়ের সুযোগও হয়েছে। এ জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাই।

শিক্ষার্থী লামিয়া খানম বলেন, আমার বাবার আর্থিক অবস্থা ভাল নয়। কোন রকমে আমাদের দিন চলছে। সেই সাথে আমি এখন ৯ম শ্রেনীতে পড়াশোনা করছি। এখানে কর্মসংস্থান হওয়ায় নিজের পড়ালেখার খরচ চালানোর পাশাপশি দরিদ্র পিতা সাহায্য করতে পারছি।

শেখ লুৎফর রহমান আদর্শ ডিগ্রী কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী দিপা বিশ্বাস বলেন, বাবা অনেক আগেই মারা গেছেন। এখন সংসারে মা, ভাই, বোন ও কাকা, কাকী রয়েছেন। আমাদের আর্থিক অবস্থা ভাল নয়। নিজের পড়ালেখার খরচ চালানোর পাশাপশি পরিবারে একটু সহযোগীতা করতে এখান থেকে হস্তশিল্পের প্রশিক্ষণ নিয়েছি। এখন মাসে যা আয় হবে তা দিয়ে নিজেদের সংসারে কিছুটা হলেও আর্থিক স্বচ্ছলতা আসবে। এজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাই।

বাংলাদেশ ইয়ূথ ফার্স্ট কনসার্ন্স এর ট্রেইনার ক্রস্টিনা দাস নদী ও দিপ্তী রানী ত্রিপুরা জানান, এখানে নারীদের হস্তশিল্পের আওতায় মাফলার, চাঁদর ও বউ টুপি বুনানোর প্রশিক্ষন দিয়েছি। নারীরা প্রশিক্ষণ নিয়ে এসব পন্য তারা তৈরী করেছেন। এতে তারা শেখার পাশাপশি কর্মজীবি হয়ে উঠছেন।

বাংলাদেশ ইয়ূথ ফার্স্ট কনসার্ন্স এর প্রোগ্রাম প্রধান মার্ক রিপন সরকার বলেন, এ সংগঠনটি আগে মাদক নিয়ে কাজ করছেন। যাতে যুবক যুবতীরা মাদক থেকে দূরে থাকে। একই সাথে শিশুদের জীবনমান উন্নয়নেও কাজ করছে। এবার দেবগ্রাম আশ্রয়ণ প্রকল্পে যে অসহায় ও সুবিধা বঞ্চিত মায়েরা রয়েছেন তাদের উদ্যোক্তা তৈরীর জন্য হস্তশিল্পের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এরম মাধ্যমে তারা মাফলার, চাঁদর ও বউ টুপি তৈরী করছেন। এতে তারা অর্থ আয়ের সাথে যুক্ত হয়ে নিজেদের পরিবারকে স্বাবলম্বী ও স্বচ্ছল করে তুলতে পারছেন।

জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা বলেন, আশ্রয়ন প্রকল্প মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর একটি স্বপ্ন, যাতে কেউ গৃহহীন না থাকেন। তারা এখন ঘর পয়েছেন। সেই সাথে তাদের অর্থ আয়ের ক্ষেত্র কিভাবে তৈরী করে দেয়া যায় সেই বিষয়ে কাজ করা হচ্ছিল। যার ক্ষেত্র ধরে বাংলাদেশ ইয়ূথ ফার্স্ট কনসার্ন্স এর উদ্যোগে কর্মহীন নারীদের হস্তশিল্পের উপর একটি প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। এবার তারা একটি পূর্ণাঙ্গ পোশাক তৈরী করতে পারছেন। এসব পণ্যের মান অত্যান্ত ভাল। এটি বিশ্ববাজারে জন্য একটি স্ট্যান্ডার্ড পণ্য। একজন মানুষ সরকারী বা বেসরকারী সহযোগীতা বেঁচে থাকুক এটি নয়, আমরা চাই তারা তাদের হাতকে কাজে লাগিয়ে পণ্য উৎপাদন করুক। এতে তাদের জীবনে একটি ভিন্নমাত্র এনে দিবে।

তিনি আরো বলেন, তারা যেসব পণ্য তেরী করছেন এসব পণ্যের মার্কেট যদি বিশ্ববাজারে ধরিয়ে দিতে পারি তাহলে এই দেবগ্রামে বসেই তাদের উৎপাদিত পণ্য বিশ্ববাজারে বিক্রি করতে পারবে। এসব পণ্যের স্থানীয় বাজার সৃষ্টি ও অনলাইনে বিক্রি করাসহ যাতে বিদেশেও রপ্তানী করা যায় সে ব্যাপারে উদ্যোগ নেয়া হবে বলেও তিনি জানান।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..




© All rights reserved 2018 Banglarnayan
Design & Developed BY ThemesBazar.Com