সোমবার, ০৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১০:৫৫ অপরাহ্ন
মোঃ তারিকুল ইসলামঃ দেশব্যাপী তৃতীয় পর্যায়ের ইউ.পি নির্বাচন আগামী ২৮ নভেম্বরে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সময় বেশী নেই, আর মাত্র ৩দিন পরেই অনুষ্ঠিত হবে ভোট গ্রহন। বিগত দুটি নির্বাচনে বেশ কিছু অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটলেও সাধারণ মানুষ তাদের ভোট দিতে পেরে সন্তোস প্রকাশ করেছে। আশা করা হচ্ছে তৃতীয় পর্যায়ের ভোটও সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে পছন্দের প্রার্থীকে ভোটাররা ভোট দিতে পারবে। সরকার, প্রশাসন ও নির্বাচনে অংশ গ্রহনকারী সকলের আচরনে তারই পূর্বভাস পাওয়া যাচ্ছে।
গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন থেকে চেয়ারম্যান পদে ৭৭ জন প্রতিদ্বন্দিতা করছেন। দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ভোটারদের উৎসাহ যেমন বাড়ছে এবং প্রার্থীদের দিনের বিশ্রাম ও রাতের নিদ্রা তেমনই হারাম হয়ে যাচ্ছে। এক মূহুর্ত তাদের অবসর নেই। দিনরাত্রি অহর্নিষ চলছে দৌড়ঝাপ। এ বছর বিকল্প কোন পথে ভোট পওয়ার সুযোগ নেই বিধায় কোন প্রার্থীই ঘরে বসে নেই। এতে ভোটারদেরও কাজে যেমন বিঘœ ঘটছে, তেমনি শীতের রাতে ঘুম থেকে উঠে প্রার্থীদের ভোট দেয়ার আশ্বাস দিতে হচ্ছে। ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার খরচাপাতিও দেয়ার বিষয়টিও ইতমধ্যে শুরু হয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে।
উপজেলার ২নং পশারগাতি ইউনিয়নে ভোটার ১০০৭৮জন। প্রার্থী ৩জন। নৌকা প্রতিকের প্রার্থী আঃ রহমান মীরের সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থী আনারস প্রতিকের সোয়েবুর রহমান সালমিন মিয়ার প্রবল প্রতিদ্বন্দিতা হবে বলে অনেকে মন্তব্য করেছেন।
৩নং গোবিন্দপুর ইউনিয়নে ভোটার ১৯৪১০জন। প্রার্থী ৪জন। নৌকা প্রতিকের প্রার্থী ওবায়দুল ইসলামকে আনারস প্রতিকের প্রার্থী ইনামুল হকের সঙ্গে সমানে সমান অবস্থায় প্রতিদ্বন্দিতা করতে হচ্ছে। বিপুল অর্থ বিত্তের মালিক ওবায়দুল ইসলাম শেষের কয়েকদিনে ভাড়ার ঘরের তালা খুলে দিবেন,যা তিনি করে থাকেন। তার বিপরীতে ইনামুল কতোটুকু টিকবেন তা দেখতে অপেক্ষা করতে হবে।
৪নং খান্দারপাড়া ইউনিয়নে ভোটার ৯২৫৩জন। প্রার্থী তিন জন। মটর সাইকেল প্রতিকের প্রার্থী মোঃ সাহিদুল ইসলাস মুন্সী এবং আনরস প্রতিকের প্রার্থী কামাল হোসেন ডাবলু তেমন কোন শক্ত অবস্থান গড়ে তুলতে না পারায় নৌকা প্রতিকের প্রার্থী মোঃ সাব্বির খান বেশ সুবিধাজনক অবস্থানে আছেন।
৫নং বহুগ্রাম ইউনিয়নে ভোটার ১০১৬৩ জন। চেয়ারম্যান প্রার্থী মোট ৭জন। এ ইউনিয়নে নৌকা প্রতিকের প্রার্থী পরিতোষ সরকারের নিজ গ্রাম থেকে ডাঃ রনজিৎ বিশ্বাস ঘোড়া প্রতিকের প্রার্থী হয়েছেন এবং পার্শবর্তি বহুগ্রাম থেকে অমিত্রলাল মজুমদার টেলিফোন প্রতিকের প্রার্থী হয়েছেন। এ দুজন প্রার্থীর কারনে পরিতোষ সরকার বেশ চাপের মুখে আছেন। ইউনিয়নে আনারস প্রতিকের প্রার্থী মামুন সেখ এ সুযোগের সদব্যবহার করে মাঠ দখলের জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। অনেকের ধারনা সব শেষে পরিতোষ সরকার ও মামুন সেখের মধ্যে একটা হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে পারে। অমিতলাল মজুমদারের নিজ গ্রাম বহুগ্রামেই তিন হাজারের অধিক ভোট। তিনি যদি নিজ গ্রামের ভোটারদের ভোট আটকাতে পারেন তাহলে তিনিও প্রতিদ্বন্দিতায় আসতে পারেন।
৬নং বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নে ভোটার ৯৬৪৭ জন। মনিরুজ্জামান মোল্যা নৌকা প্রতিক পেয়েছেন। তার বিরুদ্ধে আনারস প্রতিক নিয়ে মোঃ মিজানুর রহমান সোহেল এবং মটর সাইকেল নিয়ে মোঃ বদরুজ্জামান এজাজ লড়ছেন। চতুর্থ প্রার্থী আল নাহীয়ান রজনীগন্ধা প্রতিকে নির্বাচন করছেন। প্রথম তিনজনের মধ্যে ভালো একটা ভোট যুদ্ধ হবে বলে অনেকের ধারনা।
৭নং ভাবড়াশুর ইউনিয়নে ভোটার ১০৯৫৯ জন। প্রার্থী দুইজন। উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নের মধ্যে সবচেয়ে কনিষ্ঠ ও জনপ্রিয় নৌকার প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান রিফাতুল আলম মুসা। তার সঙ্গে আনরস প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দিতা করছেন সাবেক চেয়ারম্যান তবিউর রহমান ফাকের। এ ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের প্রার্থী অন্য প্রার্থীদের চেয়ে অনেক সুবিধাজনক স্থানে রয়েছেন।
৮নং মহারাজপুর ইউনিয়নে মোট ভোটার ১৮,৩৬৯ জন। প্রার্থী ৮জন। এদের মধ্যে নৌকার প্রার্থী আশরাফ আলী আশু মিয়ার সঙ্গে ঘোড়া প্রতিকের প্রার্থী সালাউদ্দীনের মূল প্রতিদ্বন্দিতা হবে তা এখনই অনুমান করা যাচ্ছে। অপরদিকে চশমা প্রতিকে প্রার্থী খন্দকার নজরুল ইসলাম ইতিমধ্যে বেশ শক্ত অবস্থান তৈরী করতে সক্ষম হয়েছেন।
৯নং বাটিকামারী ইউনিয়নে ভোটার ১৫৬৭৯ জন। প্রার্থী ৪জন। নৌকার প্রার্থী শাহ আকরাম হোসেন জাফর এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী ঘোড়া প্রতিকের ইবাদত হোসেন বাদতের মধ্যে হাড্ডা হাড্ডি লড়াইয়ের পূর্বাভাস পাওয়া যাচ্ছে। আনারস প্রতিকের রিনা বেগম এবং ইসলামী আন্দোলনের হাতপাখ প্রার্থী রুবেল হোসেন ভোটের মাঠে সাড়া জাগাতে পারেননি।
১০ নং দিগনগর ইউনিয়নে ভোটার ২২,৩৭২ জন। নৌকা প্রতিকের প্রার্থী মোহাম্মাদ আলী, মটর সাইকেলের প্রার্থী শফিকুল ইসলাম সাগর মোল্যা এবং আনারস প্রতিকের প্রার্থী জাহিদুল ইসলাম লিটু মোল্যা নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। নৌকার প্রার্থী যদি তার কর্মী সমর্থকদের সঠিকভাবে কাজে লাগাতে না পারেন তাহলে ফলাফল অনিশ্চিত হয়ে পড়তে পারে।
১১নং রাঘদি ইউনিয়নে ভোটার ১৬০৩৭ জন। প্রার্থী চারজন। এ ইউনিয়নে নৌকা প্রতিক পেয়েছেন সাহিদুর রহমান টুটুল। জিন্দার আলী সাইফুর চশমা, মোঃ আক্কাস মোল্যা মোটর সাইকেল এবং জাহীদুর রহমান মজনু আনারস প্রতিক নিয়ে নির্বাচনে নেমেছেন। এদের মধ্যে নৌকা প্রতিকের প্রার্থী সবার চেয়ে এগিয়ে আছেন। তার পরের অবস্থান চশমা প্রতিকের। অপর দুজনকে মাঠে খুব বেশী দেখা যাচ্ছেনা।
১২নং গোহালা ইউনিয়নে ভোটার ১৬,৮১১ জন। প্রার্থী মোট তিনজন। ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য নজরুল ইসলাম মাতুব্বর নৌকা প্রতিক নিয়ে ভোট যুদ্ধে নেমেছেন। তার বিপক্ষে আনারস প্রতিক নিয়ে নেমেছেন শাহাদত হোসেন লিটন এবং চশমা প্রতিক নিয়ে প্রতিদ্বন্দিতা করছেন শেখ মোঃ আবুল কালাম। গোহালা ইউনিয়নটি কুমার নদের কারনে উত্তর দক্ষিনে বিভক্ত হয়েছে। কুমারের উত্তর পাড়ে ইউনিয়নের আটটি ওয়ার্ড এবং দক্ষিন পাড়ে ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ড। এ ওয়ার্ড থেকেই নৌকার একক প্রার্থী হয়েছেন নজরুল ইসলাম মাতুব্বর। ৯নং ওয়ার্ডে ভোটার সংখ্যা ২, ৬৯৫টি। উত্তর পাড়ের ১৪,১১৫ ভোটার নিয়ে দাড়িয়েছেন অন্য দুজন প্রার্থী। ভোটাররা যদি কুমারের এই বিভক্তিকে বড় করে দেখেন, তাহলে নজরুল ইসলামের ভাগ্যে বিপর্যয় নেমে আসতে পারে।
১৩নং মোচনা ইউনিয়নে মোট ভোটার ১৪১৫৭ জন। প্রার্থী ৬ জন। নৌকা প্রতিকের প্রার্থী মোঃ দেলোয়ার হোসেন মোল্যা এবং আনারস প্রতিক নিয়ে মাঠ দখলের চেষ্টা করছেন মোঃ এমদাদ হোসেন। অন্যদিকে মোচনা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান রাজ্জাক শিকদারের পুত্র মোঃ শওকত আলী শিকদার চশমা প্রতিকে বেশ শক্ত অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। নৌকার প্রার্থী বিপক্ষের দ্বীমুখি চাপের সামনে কেমন প্রতিরোধ গড়তে পারবেন তা দেখতে অপেক্ষা করতে হবে।
১৪নং উজানী ইউনিয়নে মোট ভোটার ১১১৪৮ জন। প্রার্থী চারজন। এ ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী শ্যামল কান্তি বোস। তার চির প্রতিদ্বন্দী দীনেশ চন্দ্র মন্ডল এবারেও আনারস প্রতিক নিয়ে ভোট যুদ্ধে নেমেছেন। অপর দুজন প্রার্থী আশরাফুল আলম পলু পেয়েছেন ঘোড়া প্রতিক এবং নওশের লস্কর মটর সাইকেল। তবে উজানীতে নৌকা ও আনারস প্রতিকের মধ্যে একটা দর্শনীয় লড়াই হবে বলে অনেকের ধারনা।
১৫নং কাশালিয়া ইউনিয়নে মোট ভোটার ৯৩৮০ জন। প্রার্থী সাতজন হলেও মাঠে আছেন নৌকা প্রতিকের প্রার্থী মোঃ সিরাজুল ইসলাম মিয়া এবং আনারস প্রতিক নিয়ে মাঠ দখলের চেষ্টা করছেন অশোক কুমার মৃধা। অন্যদিকে ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সহসভাপতি ফরহাদ মল্লিক মোটরসাইকের প্রতিকে বেশ শক্ত অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। সিরাজুল ইসলামের নিজ গ্রামে অন্য প্রার্থী থাকায় তিনি একটু বেকায়দায় আছেন। তবে যেহেতু মুকসুদপুর উপজেলার সব মানুষের প্রিয় প্রতিক নৌকার প্রার্থী, সেহেতু সঠিক পদক্ষেপ নিলে নির্বাচনী ফলাফল নিজের অনুকূলে নিতে পারেন।
১৬নং ননীক্ষির ইউনিয়নে ভোটার ১২০০৬ জন। প্রার্থী হয়েছেন আটজন। তবে মাঠে রয়েছেন মাত্র চারজন। এ ইউনিয়নে নৌকা প্রতিক পেয়েছেন শেখ রনি আহম্মেদ। বর্তমান চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান মিনা পেয়েছেন আনারস প্রতিক। সাবেক চেয়ারম্যান শেখ মজিবর রহমান লড়াই করছেন মটর সাইকেল প্রতিক নিয়ে। ইসলামী আন্দোলনের হাতপাখা নিয়ে প্রতিদ্বন্দিতা করছেন দেলোয়ার হোসেন মোল্যা। অনেকের ধারনা শেষ পর্যন্ত নৌকা প্রতিকের সঙ্গে মটর সাইকেলের মধ্যে একটি দর্শনীয় ভোট যুদ্ধ হতে পারে।
১৭নং জলীরপাড় ইউনিয়নে ভোটার ১৬৫০৭ জন। প্রার্থী পাঁচজন। উপ নির্বাচনে নির্বাচিত বর্তমান চেয়ারম্যান বিভা রানী মন্ডল পেয়েছেন নৌকা প্রতিক। যিনি উপজেলার একমাত্র নারী প্রার্থী। তার সঙ্গে আনারস প্রতিক নিয়ে প্রতিদ্বন্দিতায় নেমেছেন সাবেক চেয়ারম্যান মিহির কান্তি রায়। জলিরপাড়ে দর্শনীয় একটি ভোটযুদ্ধ হবে বলে অনেকে মন্তব্য করেছেন।
উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নের বর্তমান নির্বাচনী পরিবেশ যাই থাকুক, অভিজ্ঞ প্রার্থীরা শেষের কয়েকদিনে সকল প্রতিকূলতাকে নিজের অনুকূলে নিয়ে আসতে পারেন। পিছনে পড়া কয়েকজন প্রার্থী গত দুদিনে ঘাড়ে ব্যাগ নিয়ে মাঠে নেমে নিজের দুর্বল অবস্থানকে বেশ সবল করতে সমর্থ হয়েছেন। পরিশেষে বলতেই হয়, নির্বাচনী কৌশলে যিনি যতো পারদর্শী তিনিই ততো সফল হবেন।