সোমবার, ০৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০১:০২ পূর্বাহ্ন
মো.তারিকুল ইসলামঃ
গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর পৌরসভার নির্বাচন নিয়ম অনুযায়ী আগামী এপ্রিল মাসে হওয়ার কথা থাকলেও পবিত্র রমজানের কারনে আরো প্রায় দুইমাস পিছিয়ে জুন মাসে হতে পারে বলে অনেকের ধারনা। আসন্ন সে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতা করতে আওয়ামীলীগ থেকে মনোনয়ন পেতে হাফ ডজন নেতা কর্মী দলের হাই কমান্ডের কাছে দৌড়ঝাপ করছেন। অপরদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে নিজের অবস্থানকে শক্ত করতে মাঠে নেমে পড়েছেন।
মুকসুদপুর পৌরসভার আগামী নির্বাচন বেশ কঠিন হবে বলেই অনেকের ধারনা। ভোটাররাও ইতিমধ্যে সম্ভাব্য প্রার্থীদের শক্তি সামর্থ্য নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষন করতে শুরু করেছেন। প্রার্থীদের যোগ্যতা, জনপ্রিয়তা এবং আর্থিক স্বচ্ছলতার বিষয়ে হচ্ছে আলোচনা। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে যাদের মাঠে দেখা যাচ্ছে তাদের মধ্যে রয়েছেন গোপীনাথপুর গ্রামের আশরাফুল আলম শিমুল, চন্ডিবরদী গ্রামের সাদ্দাত করিম মন্টু, কমলাপুর গ্রামের আহাজ্জাদ মোহসীন খিপু মিয়া এবং চন্ডিবরদী গ্রামের ঐতিহ্যবাহী খান পরিবারের সন্তান এম এ খান আমান। বর্তমান বিচারে এরা সবাই বেশ শক্তিশালী প্রার্থী বলে অনেকে মন্তব্য করেছেন।
সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান গোপীনাথপুর গ্রামের ঐতিহ্যবাহী মিয়া পরিবারের সন্তান আশরাফুল আলম শিমুল আগামী পৌরসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতা করতে ইতিমধ্যেই মাঠে নেমে গনসংযোগ শুরু করেছেন। উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পূর্বে তিনি ব্যাপক ভোটের ব্যবধানে উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। তার বাবা মরহুম খাইরুল বাকি মিয়াও ইউনিয়ন পরিষদের এবং উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। তার মেঝ দাদা মরহুম আঃ মজিদ মিয়া টেংরাখোলা ইউনিয়ন বোর্ডের প্রেসিডেন্ট হিসাবে দীর্ঘ দিন মানুষের ও এলাকার কল্যানে কাজ করেছেন। মুকসুদপুরে তিনি এতই জনপ্রিয় ছিলেন যে তদানিন্তন সময়ে তিনি জমিদার রহমতজান চৌধুরীর সংগে প্রতিদ্বন্দিতা করে ফরিদপুর জেলা বোর্ডের সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। একান্ত আলাপচারিতায় আশরাফুল আলম শিমুল জানান, মানুষের পাশে থেকে মানুষের কল্যানের জন্য এবং এলাকার উন্নয়নের জন্য কাজ করা তার বংশের ধারা। উপজেলা পরিষদের চেয়ে পৌরসভায় স্বাধীনভাবে মানুষের জন্য এবং এলাকার উন্নয়নের জন্য কাজ করার সুযোগ অনেক বেশী। তাই তিনি পৌরসভা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মানুষের জন্য কতটুকু করতে পেরেছি তা জানিনা, তবে সকলের কষ্টের ও সমস্যা গুলি নিরসনে আপ্রান চেষ্টা করেছি। বিপদে পড়ে কোন মানুষ আমার কাছে অসলে তার দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছি। তার বিগত দিনের কর্মকান্ডকে বিবেচনায় এনে মানুষ তাকেই নির্বাচিত করবে এমন প্রত্যাশা তার।
চন্ডিবরদী গ্রামের সাদ্দাত করিম মন্টু এলাকার সাধারণ মানুষের কাছে একটি পরিচিত নাম। ১৯৯০ সালে তিনি তদানিন্তন টেংরাখোলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তিতে টেংরাখোলা ইউনিয়নকে মুকসুদপুর পৌরসভায় উন্নীত হলে ২০০০সালে তিনিই মুকসুদপুর পৌরসভার প্রথম মেয়র নির্বাচিত হন এবং ২০১৭ সাল পর্যন্ত একটানা প্রায় ১৮ বছর মেয়র হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। দীর্ঘদিন চেয়ারম্যান এবং মেয়র হিসাবে দায়িত্ব পালন করায় এলাকায় তার ব্যাপক পরিচিতি ঘটে এবং তার একটি নিজস্ব ভোটব্যাঙ্ক গড়ে ওঠে। সে ভোটব্যাংক ধরে রাখতে তিনি সারা বছরই সকলের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে আসছেন। একান্ত আলাপচারিতায় তিনি জানান, ২০০১ সাল থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত তিনি উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি হিসাবে দলের জন্য ব্যপক ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি জনান, পৌরসভার সাধারণ মানুষ তাকে আপন করে নিয়েছে বিধায়, মেয়র না হয়েও তিনি অসহায় মানুষের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য তাদের পাশে থেকে উপকার করার চেষ্টাকে নিজের দায়িত্ব বলে মনে করেন। চেয়ারম্যান এবং মেয়র হিসাবে দুই যুগের বেশী মানুষের জন্য এবং এলাকার উন্নয়নের জন্য কাজ করেছেন, আগামী নির্বাচনে ভোটের মাধ্যমে সাধারণ মানুষ তার কর্মের মূল্যায়ন করবে এমন আশাবাদ প্রকাশ করেন সাদ্দাত করিম মন্টু।
নির্বাচনী মাঠের তুখোড় খেলোয়াড় কমলাপুর গ্রামের আহাজ্জাদ মোহসীন খিপু মিয়া বিগত পৌরসভা নির্বাচনে পরাজিত হলেও আগামী নির্বাচনে একজন শক্তিশালী প্রার্থী হিসাবে মাঠে আসবেন বলে অনেকের ধারনা। তার সঙ্গে মুঠো ফেনে আলাপকালে তিনি জানান, পৌরসভার ৭,৮,৯ নং ওয়ার্ডের জনগনের ইচ্ছায় এবারে তিনি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতা করবেন। ইতিমধ্যে উক্ত তিনটি ওয়ার্ডের সাধারণ মানুষের সংগে গনসংযোগ সম্পন্ন করেছেন এবং ব্যাপক সাড়া পেয়েছেন। অপর ছয়টি ওয়ার্ডের সাধারণ মানুষের কাছ থেকেও বেশ ইতিবাচক সাড়া পাচ্ছেন বলে তিনি জানান। অপর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তার কোন সম্পৃক্ততা নেই। কতিপয় লোক তাদের হীনস্বার্থ হাসিলের জন্য দলীয় লেবাস পরিয়ে ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। তিনি জানান, বহু পূর্ব থেকেই তিনি রাজনৈতিক দল ত্যাগ করেছেন এবং আগামীতে কোন দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার কোন ইচ্ছে তার নেই। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবেই তিনি আসন্ন পৌর নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতা করবেন। উল্লেখ্য আহাজ্জাদ মোহসীন খিপু মিয়া তিনবার উপজেলা সমবায় সমিতি (বিআরডিবি) সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন এবং জাতীয় উন্নয়ন সমবায় ফেডারেশনের ঢাকা বিভাগীয় পরিচালক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। বিগত পৌর নির্বাচনে বিফল হলেও আগামী নির্বাচনে পৌরবাসী তাকে নির্বাচিত করে এলাকার উন্নয়নে অবদান রাখার সুযোগ দিবেন এমন প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন আহাজ্জাদ মোহসীন খিপু মিয়া।
মুকসুদপুর উপজেলার চন্ডিবর্দি গ্রামের ঐতিহ্যবাহী খান পরিবারের সন্তান পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা টেংরাখোলা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মরহুম ছরোয়ারজান খানের নাতী বিশিষ্ট দানবির, সমাজ সেবক, সিলেক্ট লাইন্স এর কর্নধর, কাগজ কলম পত্রিকার প্রধান সম্পাদক, বঙ্গবন্ধু পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এমএ খান আমান। দাদা সরোয়ারজান খান ছিলেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শের একজন নিবেদিত সৈনিক। আমান খান জানান, সেই থেকে আমাদের পরিবার আওয়ামী পরিবার হিসাবে উপজেলায় সুপরিচিত। ৭১’এর স্বাধীনতা যুদ্ধে পাক সেনা ও স্বাধীনতা বিরোধীরা তাদের বিশাল বাড়িটি সম্পূর্ন পুড়িয়ে দেয়, মাথা গোঁজার ঠাইটুকুও অবশিষ্ট ছিলনা। আল্লার অসীম কৃপা ও এলাকার মানুষের দোয়ায় ধ্বংসের সে ধকল কাটিয়ে উঠতে পেরেছেন। বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আমান খান জানান, ঢাকায় থেকেও এলাকার মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। করোনা কালীণ সময়ে বিভিন্ন প্রকার সাহায্য সহযোগিতা করে তিনি পৌরবাসীর কাছে একজন প্রিয় মানুষ হিসাবে নিজস্ব একটা অবস্থান গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, পারিবারিকভাবে এবং নিজের চেষ্টায় যে সম্পদ তিনি অর্জন করেছেন, তাতেই তিনি সচ্ছলভাবে চলতে পারেন। অবৈধভাবে রোজগার করে মানুষকে বঞ্চিত করা তার কাম্য নয়। সৎ ও নির্ভীক থেকে তিনি মানুষের জন্য কিছু করতে চান। সততা এবং মানুষের প্রতি তার আন্তরিকতাকে বিবেচনায় এনে পৌরবাসী তাকে মেয়র নির্বাচিত করবেন এমন আস্থা প্রকাশ করেন এমএ খান আমান।