বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:১৪ অপরাহ্ন
আলফাডাঙ্গা, ফরিদপুর প্রতিনিধি:
ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় সৈয়দ শরিফুল ইসলাম ওরফে সরফেজ নামে এক ইউপি সদস্যের দাপট আর অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে এলাকার সাধারণ মানুষ। শরিফুল ইসলাম আলফাডাঙ্গা সদর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য। তিনি উপজেলার বিদ্যাধর গ্রামের সৈয়দ কাশেম আলীর ছেলে।
শরিফুলের বিরুদ্ধে এলাকার আধিপত্য নিয়ন্ত্রণ,অস্ত্রবাজি, বাড়িঘর ভাংচুর-লুটপাট, লাঠিয়াল বাহিনী দিয়ে নিরীহ লোকজনকে মারধর, মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানীসহ নানা অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে। বিগত সময়ে তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পায়নি। কেউ প্রতিবাদ করলে শরিফুলের লাঠিয়াল বাহিনীর হাতে নিমর্ম নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। অনেকে পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। এভাবে শরিফুল এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
গত ১০ মার্চ রাতে ইউপি সদস্য শরিফুল ইসলামকে নিজ বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-৬। এ সময় তাঁর রান্না ঘর থেকে একটি দেশি ওয়ান শুটার, একটি চাপাতি এবং ৬টি লোহার ঢাল উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় অস্ত্র আইনে থানায় একটি মামলা হয়। জামিনে বেরিয়ে আসায় এলাকার সাধারণ মানুষের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
ইউপি নির্বাচনে শরিফুলের কথামতো ভোট না দেওয়ায় গত ১৮ এপ্রিল রাত ৮টার দিকে রাজমিস্ত্রী শুভ মিয়াকে উপজেলার বিদ্যাধর ব্রাহ্মণ জাটিগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে একা পেয়ে লোহার রড, চাপাতি ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করে শরিফুল ও তার লোকজন। শুভ এখনও সেই ভাঙা পা নিয়ে দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন। এ ঘটনায় মামলা করে আজও বিচার পাননি ওই ভূক্তভোগীর পরিবার।
প্রতিপক্ষের সমর্থক হওয়ায় গত ২০২৩ সালের ৩ মার্চ সন্ধ্যায় ‘অধরা পাঠাগারে’ বিচারের নামে শালিস বৈঠকে স্কুলছাত্র নয়ন মৃধাসহ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে অভিযুক্ত করা হয়। পরে শরিফুলের নির্দেশে শাস্তি হিসেবে তাদেরকে পিঠমোড়া করে পাঠাগারের মধ্যে বেঁধে রাখা হয়। এ সময় তাদেরকে লাঠি দিয়ে বেদম প্রহর, কিলঘুষি ও থাপ্পড় দেয় শরিফুল ও তার লোকজন। ভয়ে কেউ বাঁধা দিতে সাহস পায়নি। পরে স্থানীয়রা জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে কল করলে পালিয়ে যান শরিফুল ও তার লোকেরা। এ ঘটনায় নয়নের মামা দেলোয়ার হোসেন বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেন।
ইউপি নির্বাচনে শরিফুলের প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী হওয়ায় গত ২০২২ সালের ২৫ ডিসেম্বর মো. বোরহান উদ্দিন ও তাঁর ভাজিজা প্রিন্স মিয়াকে অতর্কিতভাবে লাঠিয়াল বাহিনী দিয়ে টেনে-হেঁচড়ে ধরে নিয়ে পিটিয়ে জখম করে। এতেও ক্ষ্যান্ত হয়নি, বাড়িতে গিয়েও বসতঘর ভাংচুর করে শরিফুলের সমর্থকরা।
উপজেলার মহিষারঘোপ বাজারের ভূষি মাল ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর মৃধা (৭০) অভিযোগ করেন। তিনি জানান, ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে শরিফুলের সাথে তার বিরোধ হয়। এরই জের ধরে গত ১৩ এপ্রিল সন্ধ্যায় উপজেলার মহিষারঘোপ বাজারে হানিফের চায়ের দোকানের সামনে ওই ব্যবসায়ীর পথরোধ করেন শরিফুল ও তার লোকজন। এক পর্যায় ৪-৫ জন সংঘবদ্ধ হয়ে অতর্কিতভাবে ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীরের ওপর হামলা করে। এ ঘটনায় থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়।
এদিকে, গত ১৫ ফেব্রুয়ারী আলফাডাঙ্গা থানায় ভূক্তভোগী উজ্জ্বল শেখের করা সাধারণ ডায়রি (জিডি) সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যাধর গ্রামের শাহাদত মিয়ার বাড়ি সংলগ্ন ব্রিজের ওপর থেকে ইউপি সদস্য শরিফুল ও তার লোকজন দেশীয় অস্ত্র প্রদর্শন করে উজ্জ্বল শেখকে ভয়ভীতি দেখায়। হাত-পা ভেঙে ফেলারও হুমকি দেওয়া হয়। পরে জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে থানায় জিডি করেন তিনি।
এছাড়া একই গ্রামের কৃষক মান্নান থান্দারকে নির্যাতন, কৃষক আক্তার মিয়া, শফিকুল মিয়া ও তার বাবা পিটিয়ে জখম, মামুনকে হাতুড়ি পেটা করে হাত-পা ভেঙে দেয়া, ইকরাম মিয়া ও চঞ্চল মিয়াকেও একই কায়দায় দু’পা ভেঙে দেয়া হয়েছে এবং শরিফুলের কথা মতো ভোট না দেওয়ায় নির্বাচন পরবর্তীতে হাবিব শেখ নামে একজনকে পিটিয়ে জখম করারসহ একাধিক ব্যক্তিকে মারধর ও নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে প্রভাবশালী ইউপি সদস্য শরিফুলের বিরুদ্ধে।
এসব অভিযোগ মিথ্যা দাবি করেছেন ইউপি সদস্য শরিফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘স্থানীয় রাজনীতিকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষ আমার বিরুদ্ধে এসব মিথ্যা অভিযোগ করেছেন।’
আলফাডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন বুলবুল বলেন, ‘এসব গ্রামের দলাদলির বিষয়কে কেন্দ্র করে হয়েছে। ওই গ্রামে হাত-পা ভেঙে দেওয়ার ৫-৬টি ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় তিনি আসামি হয়েছেন। তবে যারা এসব ঘটনার সাথে জড়িত তারা ইউপি সদস্যের কাছের লোকজন।’