বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৪৭ অপরাহ্ন
আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তুমুল উত্তেজনার মধ্যে মসজিদে যুদ্ধের প্রতীক ‘লাল পতাকা’ উড়িয়ে দিয়েছে ইরান। এই পতাকা বা ‘লাল ঝান্ডা’ ওড়ানোর অর্থ ইরান যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত।
মার্কিন বাহিনীর একপাক্ষিক হামলায় ইরানের বিপ্লবী গার্ডের কুদস্ বাহিনীর প্রধান মেজর জেনারেল কাসেম সোলেইমানি নিহত হওয়ার ঘটনায় তিনদিনের শোকের প্রথম দিন শনিবার (৪ জানুয়ারি) এ লাল পতাকা ওড়ানো হয়।
শিয়াদের পবিত্র নগরী ক্বোমের প্রখ্যাত জামকারান মসজিদের মিনারে এই লাল ঝান্ডা ওড়ানোর মুহূর্ত প্রচারিত হয় রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে।
সোলেইমানি হত্যাকাণ্ডের ‘চরম প্রতিশোধ’ নেয়া হবে বলে যুক্তরাষ্ট্রকে ইরানের হুমকির পর এই ‘লাল পতাকা’র প্রতীকী অর্থ বিপুল বলে জানাচ্ছেন সমরবিদরা।
শিয়া সংস্কৃতিতে লাল পতাকার অর্থ- অন্যায়ভাবে রক্তক্ষরণ এবং যার রক্তক্ষরণ হয়েছে তার জন্য প্রতিশোধ নেয়ার আহ্বান। ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ক্বোম নগরে এভাবে লাল পতাকা ওড়ানো হলো।
বিক্ষোভে টালমাটাল ইরাকে এক সপ্তাহ ধরে উত্তেজনা চলছিল যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে। গত ২৭ ডিসেম্বর ইরান-সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠী পপুলার মোবিলাইজেশন ফোর্সেসের (হাশদ আল-শাবি) শাখা কাতায়েব হিজবুল্লাহর রকেট হামলায় মার্কিন এক ঠিকাদার নিহত হন। তার দু’দিন পর যুক্তরাষ্ট্র আল-শাবির ঘাঁটিতে হামলা চালিয়ে ২৫ জনকে হত্যা করে।
এর প্রতিবাদে আল-শাবির সদস্যরা মিছিল নিয়ে বাগদাদের গ্রিন জোনে (পশ্চিমা দেশগুলোর ঘোষিত কথিত আন্তর্জাতিক জোন) ঢুকে মার্কিন দূতবাসে হামলা-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। তারপর শুক্রবার ভোরে বাগদাদ বিমানবন্দরে হামলা চালিয়ে জেনারেল সোলেইমানি ও আল-শাবির উপ-প্রধানসহ আটজনকে হত্যা করে যুক্তরাষ্ট্র।
কাসেম সোলেইমানি ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির সবচেয়ে আস্থাভাজন ছিলেন। দেশের সীমানার বাইরে লেবানন, ফিলিস্তিনসহ গোটা মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের যে সামরিক পরিসর বেড়েছে, তার পেছনের কারিগর ছিলেন সোলেইমানি। যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েলসহ পশ্চিমারা ইরানকে দমিয়ে রাখতে চাইলেও ‘শত্রুর চোখে চোখ রেখে লড়াই’ করার নীতিতে ইরানকে ‘প্রতিরোধযুদ্ধ’ শিখিয়েছেন তিনিই। এজন্য সোলেইমানি ইরানের ‘জাতীয় বীর’ হয়ে উঠেছিলেন। অন্যদিকে মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছিলেন যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েলসহ তেহরানবিরোধী পক্ষের।
মার্কিন বাহিনী তাকে হত্যা করায় ‘চরম প্রতিশোধ’ নেয়ার হুমকি দিয়েছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা খামেনি। এমনকি দেশের আকাশসীমায় যুদ্ধবিমানও মোতায়েন করেছে তেহরান। ইরানের এই হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে মধ্যপ্রাচ্যের ঘাঁটিগুলোতে আরও সাড়ে ৩ হাজার সৈন্য পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
এরমধ্যে তেহরান যুক্তরাষ্ট্রকে আঘাত করতে ৩৫ স্থাপনা টার্গেট করার কথা বললে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প উল্টো হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ৫২ স্থানকে টার্গেট করেছে।
এদিকে, শোকাভিভূত ইরানে পৌঁছেছে জেনারেল সোলেইমানির মরদেহ। ইরাক থেকে তার মরদেহ রোববার সকালে ইরানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় আহভাজ শহরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তার আগে ইরাকে সোলেইমানিকে শেষশ্রদ্ধা জানাতে যে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়, তাতে যোগ দেয় হাজার হাজার ইরাকি। এ সময় তারা যুক্তরাষ্ট্রের ধ্বংস ও পতন কামনা করে নানা ধরনের স্লোগান দেয়।