রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৪১ পূর্বাহ্ন
পৃথিবীর যে সকল দেশ বা জাতি শাসকদের নিপীড়ন আর নির্যাতনে নিস্পেশিত হয় তাদের উত্তরনের পথ দেখাতে বিশ্বস্রস্টা সেই জাতির ভিতর থেকে একজন পথপ্রদর্শক সৃষ্টি করে দেন। যার নেতৃত্বে সে দেশ বা জাতি পায় মুক্তির পথ। পাক সরকারের শাসন শোষনে বাঙ্গালী জাতি যখন নির্যাতিত নিস্পেষিত তখনই বাঙ্গালীকে পথ দেখাতে এগিয়ে আসলেন একজন মানুষ, যার নাম শেখ মুজিব। যার আজীবন সাধনার বিনিময়ে জাতি হিসাবে বিশ্ব দরবারে আমরা স্মীকৃতি পেয়েছিলাম, অর্জন করেছিলাম মর্যাদার উচ্চাসন; সে নেতার প্রতি আমাদের রূঢ়তা বিশ্ব সমাজে জাতিকে করেছে নিন্দিত। ১৯৭৫ সালের মধ্য আগষ্টে জাতীর পিতা, তার পরিবারের নারী শিশুসহ সকলকে হত্যা করলো যারা সেই সব মদ্যপ খুনিদের পুরস্কার প্রদানের পালা শুরু হলো ঘটনার অব্যবহিত পরেই। বিদেশী দুতাবাসে তাদের থাকার জন্য রাজকীয় আয়োজন করা হলো। শরিফুল হক ডালীম চীনে, আজীজ পাশা আর্জেন্টিনা, মেজর মহিউদ্দিন আলজেরিয়া, শাহরিয়ার ইন্দোনেশিয়া, বজলুল হুদা পাকিস্তান, রশীদ, নুর, কিসমত হোসেন, খায়রুজ্জামান, আঃ মজিদ এরা সকলেই ওস্তাদের আশীর্বাদ নিয়ে বিদেশে গিয়ে বেশ আনন্দেই দিন কাটিয়েছেন। এসব খুনিদের যারা পুরস্কৃত করল তাদের সম্পর্কে কিছু সত্য তথ্য উদঘাটন করা কি খুব বেশী হিংসাশ্রয়ী হবে। যারা একটি জাতির স্থপতিকে স্বপরিবারে হত্যা করে গর্ব করে আর সেই জঘন্য পাপকে উচ্চ কণ্ঠে জনসমে বলে এবং প্রকাশ্য বিবৃতি দিয়ে বাহবা নেয়ার চেষ্টা করে তাকে যতই পুরস্কৃত করা হোক তার পাপ মোচন বোধহয় সম্ভব হবে না। অপরদিকে পাপীকে যারা লালন করে বা প্রশ্রয় দিয়ে নিজের লালসাকে চরিতার্থ করে সেই প্রশ্রয় দাতাও পাপের সমান অংশীদার। অবশ্য বিষয়টি তার উপরই প্রজোয্য যিনি পাপ পূন্যে আস্থাশীল। এ শ্রেণীর ব্যক্তি জীবনে যাই কিছু করুক না কেন, সামাজিক বা রাষ্টীয় জীবনে তারা ধর্মভীরুতার প্রকাশ ঘটাতে পারদর্শী। বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার পরে তার মৃতদেহ খুনীদের আরো বেশী ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ালো। সিদ্ধান্ত হলো তাকে টুঙ্গীপাড়ায় সমাহিত করা হবে। কেননা ঢাকায় দাফন হলে তার সমাধীকে কেন্দ্র করে মৃত মুজিব জীবিত মুজিবের চেয়ে শক্তিশালী হয়ে আবির্ভূত হতে পারে। অন্যান্যদের ঢাকায় এমন ভাবে কবরস্থ করা হলো যে পরবর্তীতে কারো নামই পৃথক করা সম্ভব হয়নি। শিশু বয়স থেকে যে মহীয়সী নারী বঙ্গবন্ধুর সকল বিপদের শেষ আশ্রয় স্থল হয়ে শান্তনা ও প্রহরা দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে সাহস যুগিয়েছেন সেই বঙ্গজননীকে কোথায় রাখা হয়েছে তাও আমরা নির্দিষ্ট করে বলতে পারি কি? ইসলাম রক্ষার নামে মদ খেয়ে মাতাল অবস্থায় যারা জাতির প্রতিষ্ঠাতাকে হত্যা করল তারা কি শেষ পর্যন্ত ন্যায়ের উপর প্রতিষ্ঠিত হতে পেরেছে? সত্য এখন প্রতিষ্ঠিত হয়ে সকল অসত্যের জালকে ছিন্ন করে বেরিয়ে এসেছে। ঘাতকেরা দন্ডিত হয়েছে, কিন্তু বাঙ্গালীর হৃদয়ের রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়নি আজো। এ ক্ষত ততদিন থাকবে যতদিন থাকবে বাঙ্গালীর ইতিহাস। ঘাতকেরা যতই দন্ড পাক কিন্তু বঙ্গবন্ধুর রক্তের এ ঋণ কোনদিন শোধ হবেনা।