রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৪৮ পূর্বাহ্ন
মোঃ শহীদুল ইসলাস বেলায়েত
গত ১১ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হলো দেশের ৮৩৪ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। একমাত্র আওয়ামীলীগ ছাড়া অন্য কোন দল এ নির্বাচনে দলীয় প্রতিক নিয়ে সারা দেশে নির্বাচনে অংশ না নিলেও ওইসব দলের অনেককেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে এ নির্বাচনে অংশ নিতে দেখা গেছে। তবে সংখ্যায় কম হলেও কয়েকটি ইউনিয়নে ইসলামী আন্দোলনের হাত পাখা প্রতিক নিয়ে স্বল্প সংখ্যক প্রার্থীকে নির্বাচনে অংশ নিতে দেখা গেছে। এ নির্বাচনে বড় কোন সংঘর্ষ না হলেও কয়েকটি ইউনিয়নে ৯/১০জন মানুষ নির্বাচনী সহিংসতায় প্রাণ হারিয়েছেন এবং আহত হয়েছেন বেশ কিছু মানুষ। নির্বাচনে স্থানীয় প্রশাসন এবং পুলিশের সদস্যদের ভূমিকার বড় কোন পক্ষপাতিত্বের সমালোচনাও শোনা যায়নি। প্রতিটি কেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতিও ছিল চোখে পড়ার মতো। অনেকদিন পরে নির্বিঘেœ ভোট দিয়ে বেরিয়ে আসা সকল ভোটারদের মুখে সন্তোষভাব প্রকাশ করতে দেখা গেছে।
এবারের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে যে বিপুল সংখ্যক ভোটার নির্বিঘেœ ভোট দিয়েছে ইতিপূর্বের কয়েকটি নির্বাচনে তা দেখা যায়নি। স্বীকার করতেই হবে সরকারের নিরপেক্ষ সহযোগিতায় নির্বাচন কমিশন একটি সফল নির্বাচন সম্পন্ন করতে সমর্থ হয়ছে। এমন একটি সফল ও সুষ্ঠু নির্বাচনে সরকারী দলের প্রার্থীদের বিপুল জয়ের আশা করা হয়েছিল কিন্তু ফলাফল হয়েছে বিপরীত ও হতাশাজনক। মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার আটপাড়া ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী মাত্র ১২১ ভোট পেয়েছেন, যা কল্পনার অযোগ্য। এমন দুঃখজনক বৈপরিত্বের কারনগুলি খুঁজে দেখা প্রয়োজন কিনা তা সরকারী দলের উর্ধতন নেতারাই হয়তো ভেবে দেখবেন।
একজন সাধারণ সংবাদকর্মী হিসেবে আমার অনুভবে যা এসেছে তাতে মনে হয়েছে, এসব নির্বাচনে দলীয় প্রভাবের চেয়ে ব্যক্তিগত সম্পর্ক, আঞ্চলিকতা ও প্রার্থীর গ্রহন যোগ্যতাই ভোটারদের ভোটদানে বেশী প্রভাব ফেলেছে। এরসঙ্গে যুক্ত হয়েছে আরো কিছু বিষয়। যার মধ্যে অন্যতম, দলের প্রার্থী নির্বাচনে সতর্কতার ঘাটতি, প্রার্থীর নিজ এলাকায় তার গ্রহন যোগ্যতার ঘাটতি, সাধারণ মানুষের সঙ্গে তার সম্পর্ক ও আচরণ, তার সততা ইত্যাদি বিষয়গুলি বিবেচনায় এনে প্রার্থী মনোনয়ন দেয়ার পূর্বে বিবেচনায় আনা কাম্য ছিল। মাদারীপুরের সংরক্ষিত মহিলা আসনের এক সংসদ সদস্যতো প্রাকাশ্যে সনোনয়ন বানিজ্যের অভিযোগ তুলে বক্তব্য দিয়েছেন, যা একটি বহুল প্রচারীত দৈনিকে প্রকাশিত হয়েছে। সাধারণ মানুষের সেন্টিমেন্ট সম্পর্কে পূর্ব থেকেই অনুসন্ধান করার প্রতি কোন নজরই দেয়া হয়নি। যোগ্যতা এবং দলের প্রতি আন্তরিকতার বিষয়টি বিবেচনায় না এনে ব্যক্তি সম্পর্ক, তদবির ও ব্যাক্তি সার্থকে প্রাধান্য দিয়ে ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটি গঠন করায় দলের মধ্যের ফাটল বেশ বড় হয়েছে। শোনাগেছে কোন কোন ওয়ার্ডে নির্বাচনী সভা আহবান করে ওয়ার্ড কমিটির নেতারাই সভায় উপস্থিত হননি। চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নের ক্ষেত্রে আরো নিরপেক্ষ থেকে প্রার্থী মনোনয়ন দেয়া কাম্য ছিল। দলের স্থানীয় কমিটির প্রভাবশালী নেতাদের চেয়ারম্যান পদে বারবার দলীয় মনোনয়ন দেয়াকে সাধারণ মানুষ কতটুকু গ্রহন করবে তা ভেবে দেখা বাঞ্ছনীয় ছিল। একই ব্যক্তি বার বার একই পদে আসায় দলে নতুন নেতৃত্ব গড়ে ওঠার সুযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কনিষ্ঠদের উৎসাহ যেমন ভাটা পড়েছে তেমনি দলের প্রতি তাদের আন্তরিকতাও ক্রমেই নীচে নামছে। সর্বোপরি জাতীয় নির্বাচনের প্রতীক নিয়ে স্থানীয় নির্বাচনে যে কোন উপায়ে মনোনয়ন পাওয়ায় প্রার্থীরা ভোটারদের সঙ্গে যোগাযোগের চেয়ে নেতাদের সঙ্গে সময় কাটাতে বেশী আগ্রহী হতে দেখা গেছে। হয়তো তাদের ধারনা, নেতারা তাদের আয়োজিত কয়েকটি সমাবেশে বক্তব্য দিলেই ভোটাররা প্রভাবিত হয়ে ভোট দিবে। এমন মানসিকতার ফলে যা হওয়ার তাই হয়েছে। বিপুল সংখ্যক ইউনিয়ন পরিষদ সরকারি দলের হাত ছাড়া হয়ে গেছে। যা আমাদের মতো সাধারণ সমর্থক কারোরই কাম্য ছিলনা। অহংবোধ ত্যাগ করে নির্বাচনী মাঠে এখনই না নামলে সামনে হয়তো আরো বিপর্যয় অপেক্ষা করছে।