শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৫১ পূর্বাহ্ন
মোঃ শহীদুল ইসলাম বেলায়েতঃ
বিগত ২০১৫ সালে অনুষ্ঠিত গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়, যা প্রায় দুই বছর পরে ২০১৭ সালে অনুমোদন পায়। দীর্ঘদিন অপেক্ষার পরে অবশেষে মুকসুদপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আগামী ৭ সেপ্টেম্বর। ইতিমধ্যেই সম্মেলনের প্রস্তুতি গ্রহন শুরু হয়েছে। দলের পদ পেতে আগ্রহীরা নেতাদের সংগে যোগাযোগ রেখে নিজের কাঙ্খিত পদটি পেতে জোর চেষ্টা তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন।
দলীয় সূত্রে জানাগেছে, আগামী ৭ সেপ্টেম্বরের মুকসুদপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে ইতি মধ্যেই প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। বার্ষিক রিপোর্টের খসড়া প্রস্তুতের কাজ ইতিমধ্যেই প্রায় সম্পন্ন হয়ে গেছে। চূড়ান্ত প্রুফ দেখে উর্ধতন নেতাদের সামনে তাদের অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। উপজেলা পরিষদ কেজি স্কুল মাঠে অনুষ্ঠিতব্য সম্মেলনের মঞ্চ ও প্যান্ডেল তৈরীর দায়িত্বপ্রাপ্তদের কাছ থেকে জানাগেছে ৩১জন কাউন্সীলর ও ৩১জন ডেলিগেট প্রতিটি ইউনিয়ন ও পৌরসভা থেকে সম্মেলনে উপস্থিত থাকবেন। এছাড়াও আগত অতিথিদের জন্য চার হাজারের বেশী মানুষের বসার আয়োজন করা হবে।
প্রাসঙ্গিক বিষয়ে আলাপকালে দলের নেতা কর্মীরা জানান, এবারের সম্মেলন হবে ব্যাপক পরিসরে। উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সম্পাদক মন্ডলীর এক সদস্য জানান, আসন্ন সম্মেলনে ত্যাগী ও দলের প্রতি অনুগত ও একনিষ্ঠরা উপজেলা কমিটিতে এবার দলে স্থান পাবেন বলে তিনি আশা রাখেন। তিনি আরো বলেন, মুকসুদপুর কাশিয়ানীর উন্নয়নের রূপকার গন-মানুষের নেতা সংসদ সদস্য মু.ফারুক খান এ দুই উপজেলার প্রতিটি মানুষকে চিনেন এবং কারা দলের জন্য ত্যাগ স্মীকার করে আসছেন এবং কারা সুযোগ সন্ধানী তাদের সবার সম্পর্কে তিনি অবগত। সকল তদবির উপেক্ষা করে দলের প্রতি যারা একান্ত অনুগত তাদেরকে উপজেলা আওয়ামীলীগে যোগ্যতানুসারে পদবিন্যাস করে দলকে সুসংগঠিত করবেন এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক নেতা জানান, মুকসুদপুর উপজেলা আওয়ামীলীগে অঘোষিত বিভাজন রয়েছে। কয়েকটি স্থানীয় নির্বাচনে যার প্রতিফলন দেখা গেছে। এই বিভাজনের জন্য যারা দায়ী তাদের বিষয়ে সতর্ক থাকা একান্ত জরুরী। তারা আরো জানান, দলের কতিপয় প্রভাবশালী নেতার কারনে কোন নতুন নেতৃত্ব গড়ে না ওঠায় চেন অব কমান্ড বেশ দুর্বল হয়ে পড়েছে। আগামী সম্মেলনে যাচাই বাছাই করে সৎ যোগ্যতা সম্পন্ন এবং নিজ এলাকায় যাদের গ্রহন যোগ্যতা ও জনপ্রিয়তা রয়েছে তাদের নিয়ে উপজেলা কমিটি গঠন হলে বিগত দিনের ব্যার্থতাকে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। তারা জানান, বিগত কমিটিতে এমন কিছু লোককে উপজেলা কমিটিতে স্থান দেয়া হয়েছে যারা বিভিন্ন শহরের স্থায়ী বাসিন্দা এবং বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক। যারা দলের কোন সংগঠনের সাথে কোনদিন যুক্ত ছিলনা এবং তাদের সঙ্গে উপজেলার সাধারণ মানুষের কোন সম্পর্ক নেই। এমন কি অনেককে এলাকার মানুষ চেনেওনা। বিগত স্থানীয় কোন নির্বাচনে তারা কোন ভূমিকাও রাখেনি। আসন্ন নির্বাচনে এসব ব্যবসায়ীরা যাতে দলে আসতে না পারে সে বিষয়ে সতর্ক থাকার অনুরোধ করেছেন সাবেক ও বর্তমান কয়েকজন দলীয় সদস্য।
মুকসুদপুর উপজেলা তথা সমগ্র গোপালগঞ্জ জেলা স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরুর পূর্ব থেকেই আওয়ামীলীগের একটি দুর্গ বলে খ্যাত। এ উপজেলায় তৃণমূলের নির্বাচনে ২/১ টি ব্যতিক্রম ছাড়া অধিকাংশ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ পন্থীরা সব সময়ই জয়ী হয়ে থাকে। কিন্তু বিগত দুটি উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামীলীগ সমর্থিত প্রার্থীরা স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কাছে অনেক ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়। অপরদিকে ইউপি নির্বাচনে ১৬টি ইউনিয়নের নির্বাচনে কি পরিমান কাঠখড়ি পোড়াতে হয়েছে তা সবারই জানা। এর পরেও তিনটিতে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয়ী হয়েছে। উপজেলার সে ১৩টি ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থীরা অল্প ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন, যা আওয়ামীলীগ নেতা কর্মীদের হতাশ করেছে। সম্প্রতি মুকসুদপুর পৌরসভা নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী যে ভোট পেয়েছেন তাতে পৌরসভায় দলের অবস্থান তলানিতে গিয়ে পৌছেছে। অপরদিকে কাশিয়ানী উপজেলায় আওয়ামীলীগ সমর্থিত প্রার্থী পরাজিত হন এবং ইউপি নির্বাচনে সাতটির মধ্যে মাত্র দুটিতে আওয়ামীলীগের প্রার্থী জয়ী হয়। আওয়ামীলীগের এমন দুঃখ জনক ধ্বসের জন্য কারা দায়ী তা ক্ষতিয়ে না দেখলে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এর প্রভাব কিছুটা হলেও পড়বে বলে অনেকে মন্তব্য করেছেন।
মুকসুদপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের আসন্ন সম্মেলন নিয়ে যারা আগ্রহী তাদের সকলেরই মন্তব্য, দলে নবীনদের স্থান করে না দিয়ে বিশেষ কতিপয় ব্যক্তি তাদের আধিপত্যকে ধরে রাখতে গিয়ে মারাত্মকভাবে দুর্বল করে ফেলেছেন দলকে। আগামী সম্মেলনে যদি পূর্বের ধারা বহাল থাকে, তাহলে আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক কাঠামোর শক্তি কতটা দুর্বল হবে সংশ্লিষ্টরা ভেবে দেখবেন এমন প্রত্যাশা আওয়ামীলীগ ভক্তরা করতেই পারেন। সেক্ষেত্রে প্রবীণদের আরো উপরে টেনে নিয়ে নতুন নেতৃত্ব গড়ে ওঠার সুযোগ করে দিতে হবে এবং দল যাতে একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান না হয় সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি কাম্য; নইলে মুকসুদপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের গতি আগামী দিনে আরো মন্থর হয়ে পড়বে, যা বঙ্গবন্ধুর একান্ত অনুসারিদের আরো হতাস করবে।