মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৪৭ অপরাহ্ন
এম এ ইউসুফ রাণীনগর (নওগাঁ):
নওগাঁর রাণীনগর উপজেলায় ৮টি ইউনিয়নের বেশকিছু এলাকায় সোনালী আঁশ হিসেবে খ্যাত পাট চাষ দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে এই সব এলাকায় এখনো সনাতন পদ্ধতিতে পাট জাগ দেওয়া হয়। ফলে এক দিকে যেমন কমছে পাটের গুনগত মান অন্য দিকে ক্ষতি হচ্ছে পরিবেশের।
রিবন রেটিং পদ্ধতিতে পাট জাগ দেওয়া আধুনিক পদ্ধতি। প্রথমে পাটের আঁশ ছাড়িয়ে নিতে হয় তারপর পাটের আঁশে রিং আকারে আটি বেঁধে পানির একটি হাউজের মধ্যে জাগ দেওয়া হলে পাটের গুনগত মান ভাল হওয়ার কারণে কৃষকরা পাটের নায্য মূল্য পায়। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ পাট চাষের আধুনিক পদ্ধতি ও কাটার পর পাট পঁচানোর জন্য মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করলেও ঝামেলা জনিত কারণে তা মানছেন না কৃষকরা।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে মেস্তা পাট, দেশী পাট ও তোষা জাতের পাট প্রায় ৭০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ করা হয়েছে। বিগত বছরে পাটের ভাল ফলন ও দাম আশানুরুপ পাওয়ায় চাষিরা অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি পাট চাষের দিকে আগ্রহী হয়ে উঠছে। গত কয়েক বছরগুলোতে চাষিদের উৎপাদিত ধানসহ অন্যান্য কৃষিজাত ফসলে লোকসান হওয়ার কারণে এলাকার চাষিরা পাটের আবাদে মনোযোগ দিচ্ছে। ফলন ও দাম ভাল পেলে চাষিদের আগ্রহ আরো দিনদিন বৃদ্ধি পাবে এমনটায় আশা করছেন স্থানীয় কৃষি বিভাগ।
প্রতি বিঘা জমিতে প্রায় ১৫ মন পর্যন্ত পাট উৎপাদন হয়। তবে চাষিদের কৃষি অফিসের পরামর্শে পাট জাগ না দেওয়ায় সনাতন পদ্ধতিতে পাট জাগ দেওয়ার কারণে পাটের রং কালো ও গুনগত মান কমে যাচ্ছে। শুধু তাই নয় খোলা রাস্তায় ধুলা-বালির উপর পাট শুকানোর কারণে মান নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। ইতিমধ্যেই হাটে-বাজারে পাট বিক্রয়ের জন্য কৃষকরা নিয়ে আসতে শুরু করেছে। মান ভেদে প্রতি মন কাচা পাট ১৬ শ’ থেকে মান ভেদে ১৮শ’ টাকা পর্যন্ত স্থানীয় বাজারে বেচা-কেনা হচ্ছে। পাট চাষে খরচের তুলনায় বাজার মূল্য কম।
উপজেলা গোনা ইউনিয়নের মালঞ্চি গ্রামের পাট চাষি মো: আব্দুর রশিদ জানান, আমি নিজের জমিতে বোরো ধানের চাষ করতাম। কিন্তু ধানের জমি কিছুটা কমিয়ে পাট চাষের দিকে মনোযোগ দিয়েছি। তাই এবছর আমি ২বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছি। গত কয়েক দিন আগে পাট কেটে পঁচানোর জন্য সাড়িবদ্ধ করে পানিতে রেখেছি। নিচের অংশ পঁচনোর ভাব দেখে কয় দিন পর পাল্টে দিয়ে মাঠি ও কলা গাছ দিয়ে ঢুবে রাখবো।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শহীদুল ইসলাম বলেন, বিগত বছরগুলোতে পাটের বাজার কম থাকাই এই ফসলের প্রতি চাষিদের আগ্রহ কমে গিয়েছিল। বর্তমান সরকার খাদ্যদ্রব্যসহ বিভিন্ন পণ্যে পরিবেশ বান্ধব পাটের মোড়ক বহুবিদ ব্যবহার করায় বর্তমানে পাটের উৎপাদন ও বাজার দর ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করায় প্রান্তিক পর্যায়ে চাষিদের পাট চাষের আগ্রহ অনেকটায় বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু পাট জাগ পদ্ধতি বিষয়ে কৃষকরা রিবন রেটিং পদ্ধতিতে পাট দিতে নারাজ। সনাতন পদ্ধতিতে পাট জাগ দেওয়ায় গুনগত মান খারাপ হওয়ার কারণে চাষিরা নায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।