বৃহস্পতিবার, ১০ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:৫১ অপরাহ্ন
বিশেষ প্রতিবেদক: জুলাই গণ অভ্যুত্থান ঘটনায় সরাসরি আর্থিক সহযোগীতাসহ এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে গণপূর্তের প্রধান প্রকৌশলীসহ ৯৭ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করা হয়েছে।
তথ্য বলছে, গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী শামীম আখতারসহ প্রতিষ্ঠানটির একাধিক প্রধান প্রকৌশলী ও নির্বাহী প্রকৌশলী এ হত্যাকাণ্ডে জড়িয়ে আছেন।
ক্ষমতাচ্যুত হাসিনা সরকারের আমলে বিভিন্ন প্রকল্পে অনিয়ম-দুর্নীতি করে শত শত কোটি টাকার মালিক হওয়া এসব প্রকৌশলী জুলাই-আগস্টে আন্দোলন দমনে কোটি কোটি টাকা জোগান দিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তাদের অনেকের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগ জমা আছে এবং তদন্ত চলছে। এ ছাড়াও আওয়ামী লীগ সরকারের সময় দুর্নীতিতে সামনের সারিতে থাকা এসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তখন ব্যবস্থা নেওয়া তো দূরের কথা, অনেককেই বারবার পুরস্কৃত করা হয়েছে।
এদিকে, মামলা সুত্রে যাদের নাম রয়েছে সেসব আসামীরা হলেন (১) মো. শামীম আক্তার (প্রধান প্রকৌশলী,গণপূর্ত অধিদপ্তর), (২)আগস্টিন পিউরিফীকেশন, চেয়ারম্যান (৩) মো:জালাল আহমেদ আওয়ামী লীগ নেতা ফরিদগঞ্জ. (৪) শাহিন আলম, সাব রেজিস্টার তেজগাঁও , (৫) মোঃ শাহাবুদ্দিন আহমেদ, (৬) মাইমুরা ইকরা , ফরিদগঞ্জ আওয়ামী লীগ নেত্রী, (৭) মোঃ কামাল নায়েব,(৮) মো: হাসিবুল আলম তালুকদার ,(৯) এস এম ফিরোজ আলম, (১০) মো: রিপন মুন্সী,(১১) নাসিম খান, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী গণপূর্ত,(১২) মো: উজ্জল মিয়া,(১৩) মো: মোখলেছ ঠাকুর,,(১৪) শাহেদ মিয়া বাবুল( ল্যাব এইড বাবুল)(১৫) মোঃ আনছার উদ্দিন বেপারী, আওয়ামী লীগের অর্থ যোগানদাতা,(১৬) কাজী তারেক সামশ, আওয়ামী লীগের অর্থদাতা,(১৭) মো: বাবু শেখ..(১৮) শংকর চন্দ্র হাওলাদার, (১৯) হিরোন চন্দ্র হাওলাদার.(২০) ঝন্টু চন্দ্র হাওলাদার, (২১) মো: আবুল কাশেম.(২২) মো: আতিকুল ইসলাম. নির্বাহী প্রকৌশলী গণপূর্ত অধিদপ্তর,(২৩) প্রশান্ত দত্ত, ইমারত পরিদর্শক ৪/১ মহাখালী রাজউক, (২৪) পাট্রিক পালমা. জিএম ক্লাব,(২৫) মোহাম্মদ আমান উল্লাহ, গণপূর্ত,(২৬) তাজুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের অর্থদাতা,(২৭) সরোয়ার জামান চৌধুরী, আওয়ামী লীগের অর্থদাতা,(২৮) কাজী মোঃ ওয়াহিদুল ইসলাম,, আওয়ামী লীগের অর্থদাতা, চেয়ারম্যান রূপালী ব্যাংক,,(২৯) মো: এনামুল হক, গণপূর্ত, বড়বাবু ১২ তলা,(৩০) মো: তরিকুল ইসলাম,(৩১) মাহফুজ আলম, স্টাফ অফিসার, গণপূর্ত,(৩২) মো: সাইফুজ্জামান চুন্নু, ফরিদপুর গণপূর্ত,(৩৩) আবু সুফিয়ান মাহাবুব, নির্বাহী প্রকৌশলী গোপালগঞ্জ গণপূর্ত,(৩৪) মোসলেহ উদ্দিন আহাম্মেদ, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী গণপূর্ত,(৩৫) মো: নেছার আহমেদ(বাবুল),, স্পা বাবুল,(৩৬) মো: আবুল হাসেম, আওয়ামী লীগের অর্থদাতা (৩৭) মোহাম্মদ বাহার,স্পা বাহার,(৩৮) তুষার মোহন সাধু খা, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী অধিদপ্তর,(৩৯) জোটন দেবনাথ, গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক। মামলার পর থেকে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সুবিধাভোগী এসব প্রকৌশলী রয়েছেন গ্রেপ্তার আতঙ্কে। এদের বিরুদ্ধে বাড্ডা থানায় মামলা যার নং সি আর ৬৩/২৫ থানার এফ আই আর মামলা নং ০৬ তারিখ ০৩ মার্চ। অন্যদিকে দুর্নীতির দায়েও কাউকে কাউকে বিচারের মুখোমুখি করা হতে পারে বলে জানা গেছে। ফলে গুরুত্বপূর্ণ এসব প্রকৌশলী কাজে নিয়মিত নন। এতে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। অধিদপ্তরজুড়ে। এরই মধ্যে কয়েকজনকে ঢাকার বাইরে বদলি করা হয়েছে। তাতেও কাজে গতি ফেরেনি।
প্রধান প্রকৌশলীর শামীম আখতারের একান্ত আস্থাভাজন সাইফুজ্জামান চুন্নু সকল অপকর্মের মূল হোতা। চুন্নু শামীম আখতারের আস্থাভাজন হওয়ার জন্য সকল অপকর্ম নিজ হাতে সমাধান করে থাকেন। নির্বাহী প্রকৌশলী আমানুল্লাহ সকল রোডম্যাপ করে দিতেন। আমানুল্লাহ প্রধান প্রকৌশলীর সকল অপকর্ম আড়াল করতে প্রধান প্রকৌশলীর টাকা পয়সা হেফাজত করে থাকেন।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় বসার পর আন্দোলন ভন্ডুল করার চেষ্টাকারীদের দোসর হিসেবে পরিচিত এসব প্রকৌশলীকে বিচারের মুখোমুখি করার প্রক্রিয়া চলছে। এরই ধারাবাহিকতায় এসব প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে রাজধানীর পল্টন, রামপুরা ও সাভার থানায় পৃথক হত্যা মামলা হয়েছে। মামলা হয়েছে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতেও। এদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদের সক্রিয় সদস্য।
আসামির তালিকায় থাকা কয়েকজন প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, এসব মামলার সঙ্গে জড়িত কয়েকটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন। মূল উদ্দেশ্য মামলার আসামিদের বিভিন্ন চাপে রেখে ঠিকাদারি কাজ ও অর্থনৈতিক সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করা। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্ণধাররা এখন উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এ মামলায় গ্রেপ্তারের ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। টাকা দিলেই মামলা থেকে রেহাই পাব বলা হচ্ছে।
বিগত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের সময় কিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিতর্কিত কর্মকাণ্ডসহ দলীয়করণ ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। যারা বিগত সরকারের সময় সুযোগ-সুবিধা ভোগ ও দুর্নীতি-অনিয়ম করেছেন, তাদের অবশ্যই বিচার হওয়া উচিত। তা না করে ঢালাওভাবে মামলা দেওয়া হয়েছে। চাকরি হারানো এবং মামলায় গ্রেপ্তারের ভয় তো থাকবেই।
প্রকৌশলীদের অভিযোগ, মামলা নিয়ে সুনির্দিষ্টভাবে মন্ত্রণালয় বা অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে সুরাহা করার পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। গণপূর্ত অধিদপ্তরের শীর্ষ কর্মকর্তাদের কেউ-ই এ বিষয়ে মুখ খুলতে নারাজ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক প্রকৌশলী গণমাধ্যমে জানান, এখানে যাদের হাতে ক্ষমতা থাকে তাদের ইচ্ছায় সব হয়। ছাত্র-জনতা হত্যার পাশাপাশি অনেকে দুর্নীতির সঙ্গেও জড়িত। তারা এখন প্রকৌশলী হওয়ার চেষ্টায় রয়েছেন। এর আগে গণপূর্তের এসব প্রকৌশলী জি-কে শামীমের সঙ্গে সখ্য গড়ে ব্যাপক দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন।
তারা আরো বলেন, কয়েক দিন আগে আশরাফুল আলম গণপূর্ত অধিদপ্তরে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (রিজার্ভ) হয়ে এসেছেন। এর আগেও তিনি গণপূর্তে ছিলেন। তখন তার বিরুদ্ধে বিপুল অনিয়মের অভিযোগ ছিল। দুর্নীতির দায়ে তাকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে হাউজিং অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক হিসেবে বদলি করা হয়।
কিছুদিনের মধ্যে তিনি প্রধান প্রকৌশলীর দায়িত্ব নেবেন এমন গুঞ্জন রয়েছে। তার বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে সহযোগিতার অভিযোগ রয়েছে; কিন্তু রহস্যজনক কারণে কোনো মামলা হয়নি। গণপূর্তের সবাই তাকে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা হিসেবে চেনেন।প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ শামীম আখতারের সঙ্গে মামলার বিষয়ে কথা বলতে গেলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব হামিদুর রহমান খান গণমাধ্যম কে কে বলেন, যারা দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা তাদের তালিকা হচ্ছে। কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে আদালত থেকে কোনো চিঠি আসেনি। এলে ব্যবস্থা নেব।