মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:১২ অপরাহ্ন
মোঃ তারিকুল ইসলামঃ
দেশের যেসব ইউনিয়ন পরিষদের মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যে সে সব ইউনিয়নের নির্বাচন শুরু হয়ে গিয়েছে। গত ২০ সেপ্টেম্বর সোমবার প্রথম ধাপে ১৬১টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। পর্যায়ক্রমে মেয়াদ উত্তীর্ন অন্য সব ইউনিয়নেও নির্বাচন হবে বলে ধারনা করা হচ্ছে। গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন পরিষদের মেয়াদ গত জুন মাসেই শেষ হয়ে গেছে। উপজেলার একটি মাত্র পৌরসভা মুকসুদপুর পৌরসভার নির্বাচনের সময়ও আগামী বছরের শুরুতেই। করোনার কারনে এসব ইউনিয়নের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে নাই। সম্প্রতি নির্বাচন কমিশন আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে মেয়াদ উত্তির্ন সকল ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন সম্পন্ন করার ঘোষনা দিয়েছেন। সে হিসেবে এ উপজেলার সব ইউনিয়নের নির্বাচন আগামী নভেম্বরের শেষ দিকে অথবা ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে হতে পারে বলে ধারনা করা হচ্ছে।
নির্বাচন কমিশনের এমন ঘোষনায় সারা দেশের ন্যায় মুকসুদপুরের সকল ইউনিয়নের সম্ভাব্য প্রার্থীরা ইতিমধ্যেই বেশ নড়াচড়া শুরু করেছেন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। দলীয় এবং স্বতন্ত্র সম্ভাব্য প্রার্থীরা প্রতিটি গ্রামে ব্যাপক জনসংযোগ শুরু করেছেন। দলের মনোনয়ন পেতে উপজেলা আওয়ামীলীগ অফিসে প্রতিদিন হাজিরা দিয়ে চেষ্টা তদবির চালাচ্ছেন দলীয় মনোনয়ন পেতে। অনেকেই সংসদ সদস্য মুঃ ফারুক খানের কাছে গিয়ে তার আশির্বাদ পেতে ঘন ঘন ঢাকায় যাচ্ছেন। কেউ আবার সংসদ সদস্য মুঃ ফারুক খানের কাছে সুপারিশ করতে দলের উচ্চ পর্যায়ের নেতাদের কাছে ধর্না দিচ্ছেন বলে অসমর্থিত সূত্রে জানাগেছে।
সম্ভাব্য সব প্রার্থীরা হাট বাজারে, চায়ের দোকানে বসে তাদের প্রার্থীতার কথা জানান দিচ্ছেন এবং চায়ের দোকানের বিল পরিশোধ শুরু করেছেন। এসব প্রার্থীদের সমর্থকরা চায়ের দোকানে বসে নিজ পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে গুনগান করছেন। পাশাপাশি বাড়ছে চায়ের কাপের টুংটাং শব্দ, উড়ছে গরম চায়ের ধোঁয়া। বাড়ছে পান সিগারেটের বেচাকেনা। সাধারণ ভোটাররা এসব প্রার্থীদের বিগত দিনের কর্মকান্ড নিয়ে করছেন বিচার বিশ্লেষন। অপরদিকে যেসব সম্ভাব্য প্রার্থী নির্বাচনে আসবেন কিন্তু তাদের দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম তাদের একটি বড় অংশ নির্বাচনে যাতে দলীয় প্রতিকসহ মনোনয়ন দেয়া না হয় সেজন্য সরকারের উচ্চ পর্যায়ে চেষ্টা তদবির চালাচ্ছেন এমন সংবাদ শোনা যাচ্ছে। তাদের বক্তব্য, যেহেতু মুকসুদপুর সহ সমগ্র গোপালগঞ্জ জেলাতে শতকরা ৯৫ জনই আওয়ামীলীগের সমর্থক সেহেতু এ জেলাতে দলীয় মনোনয়ন দিলে দলের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি হবে, তাই দলীয় মনোনয়ন না দিয়ে উন্মুক্ত করে দিলে দলের বিভক্তি হবেনা। নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই নতুন করে ঝালাই হচ্ছে পুরাতণ আত্মিয়তা ও সাবেক ভালবাসার সম্পর্ক। প্রার্থীরা নিয়মিতই এগ্রাম সেগ্রামে গিয়ে করছেন উঠোন বৈঠক, আদায় করার চেষ্টা করছেন সমর্থন ও মুরব্বীদের দোয়া আশির্বাদ।
মুকসুদপুর উপজেলায় যেহেতু আওয়ামীলীগের সমর্থক ৯৫ পার্সেন্টের অধিক, সেহেতু আওয়ামীলীগের দলীয় মনোনয়ন পেতে অনেকেই আগ্রহী হবেন এটাই স্বাভাবিক। দলের মনোনয়ন পাওয়ার মানেই হচ্ছে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার প্রায় ৭৫শতাংশ নিশ্চয়তা। সেক্ষেত্রে দলীয় হাই কমান্ডও বিবেচনা করবেন যারা উপজেলা এবং ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের কমিটির সঙ্গে জড়িত আছেন দলের প্রতি তার বিগত দিনের অবদান এবং ভূমিকাকে। বিগত ইউপি নির্বাচনে লবিং, তদবির সহ বিভিন্ন পন্থায় অনেকে দলীয় মনোনয়ন পেলেও এ বছরের আসন্ন নির্বাচনে মনোনয়ন আরো স্বচ্ছ এবং সুবিবেচনা প্রসূত হবে বলে সকলের কাম্য। তাদের ধারনা নির্বাচন যদি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয় তবে সে ক্ষেত্রে সকল ইউনিয়নেই দলকে ভোটারদের কাছে গ্রহনযোগ্য প্রার্থী বাঁছাই করে মনোনয়ন দিতে হবে; নইলে দলের বর্তমান শক্ত অবস্থানের ভিত দুর্বল হয়ে পড়তে পারে। সে ক্ষেত্রে আত্মিয়তা, আঞ্চলিকতা এবং আর্থিক প্রভাব পড়তে পারে ভোটারদের উপর।
অসমর্থিত তথ্যে জানাগেছে, উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নের মধ্যে ইতিমধ্যে যে কয়টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন প্রায় চূড়ান্ত বলে মনে করা হচ্ছে তাদের মধ্যে অন্যতম হলো, ভাবড়াশুর, বাঁশবাড়িয়া, রাঘদি ও খান্দারপাড়া। এ চারটি ইউনিয়নে যারা বিগত নির্বাচনে মনোনয়ন পেয়েছিলেন এ বছরও তারাই মনোনয়ন পাবেন বলে প্রায় নিশ্চিত। দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, জনগন থেকে বিচ্ছিন্ন, দলীয় বিভক্তি ও স্থানীয় কোন্দলের কারনে মহারাজপুর, গোহালা, কাশালিয়া, মোচনা, গোবিন্দপুর, বাটিকমারী, জলিরপাড়, উজানী এ আটটি ইউনিয়ন থেকে বিগত নির্বাচনে যারা নির্বাচন করেছিলেন তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন ঝরে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পশারগাতী, ননীক্ষির, বহুগ্রাম, দিগনগর এ চারটি ইউনিয়নে নতুন মুখ মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা অধিক। গোবিন্দপুর, বাটিকমারী, জলিরপাড়, উজানী, পশারগাতী, বহুগ্রাম এ ছয়টি ইউনয়নে যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচন করবেন বলে শোনা যাচ্ছে বর্তমান প্রেক্ষাপটের বিচারে তারা খুবই শক্তিশালী প্রার্থী বলে অনেকে মন্তব্য করেছেন। মনোনয়ন বোর্ডের সামান্য দুর্বলতা, স্বজনপ্রীতি বা লোভ দলের জন্য অনেক বড় ক্ষতির কারন হতে পারে এমন শংকা প্রকাশ করেছেন কেউকেউ। একটি বিশ্বাস যোগ্য সূত্র জানিয়েছে,যে সব ইউনিয়নে অপেক্ষাকৃত দুর্বল প্রার্থী রয়েছেন,সে সব ইউনিয়নে শক্তিশালী প্রার্থী খুঁজে বের করতে দলের স্থানীয় হাই কমান্ড তথ্য সংগ্রহ করছেন। একাধিক সূত্রে জানাগেছে,ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে উপজেলা কমিটির সুপারিশ গুরুত্বপূর্ণ হলেও সংসদ সদস্য মু.ফারুক খানের সিদ্ধান্তই হবে চ’ড়ান্ত।